spot_img

ইসলামে গঠনমূলক সমালোচনার নীতি

অবশ্যই পরুন

সমাজে আমরা কেউই নিখুঁত নই। ভুল আমাদের হতেই পারে, তবু আমরা চাই, কেউ যেন আমাদের ভুল ধরিয়ে দিলে তা হোক স্নেহভরা, মার্জিত, সম্মানজনক। কিন্তু বাস্তবতায় আমরা অনেক সময় একে অন্যের দিকে তীর ছুড়ি ‘নসিহতের’ নামে, যেটি অনেক সময় হয় অহংকার, হিংসা বা ক্ষোভের মুখোশ পরা সমালোচনা।

ইসলাম এক পরিপূর্ণ জীবনদর্শন। যেখানে এই বিষয়ে কতোই না সূক্ষ্মতা, ভারসাম্য ও আদব আমাদের শিখিয়েছে। অন্যের ভুল ধরিয়ে দেওয়া, উপদেশ দেওয়া, কিংবা সমালোচনা করা। এসব যেন হয় আলোর মতো, যা গরম করে না, কেবল আলোকিত করে।

আল্লাহর নির্দেশ: কথা যেন হয় উত্তম
আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন কোরআনে বলেন, ‘তোমরা মানুষের সাথে সুন্দর কথা বল।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ৮৩)
অন্য আয়াতে বলেন, ‘তোমার বান্দাদের বলে দাও, যেন তারা সেই কথাই বলে, যা সর্বোত্তম।’ (সুরা আল-ইসরা, আয়াত : ৫৩)
এই দুটি আয়াত সমালোচনার ভাষা নির্ধারণে মুসলিমদের জন্য সংবিধান স্বরূপ। সমালোচনা যদি হয় হঠকারিতা কিংবা মনোবিদ্বেষের সাথে, তবে তা হবে সেই শয়তানি ফাঁদ, যা সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই তো মহান আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে বলেন, ‘নিশ্চয় শয়তান তাদের মাঝে ফাঁস লাগিয়ে দেয়।’ (সুরা আল ইসরা, আয়াত : ৫৩)

সমালোচনায় কোমলতা ও সৌজন্য নববী শিক্ষা
মহানবী (সা.) বলেন: ‘দ্বীন তো উপদেশ।’ (মুসলিম, হাদিস: ৫৫)
এখানে উপদেশের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হলেও তা হতে হবে শরীয়তের বাতলে দেওয়া আদব অনুযায়ী। আর তা কীভাবে? সে ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেন: ‘মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯৮৭)

অতএব, ইসলামী শরিয়তের আদব অনুযায়ী সমালোচনা মানে, তাতে থাকবে ভালোবাসা, পরামর্শ ও ভ্রাতৃত্ব; থাকবে না বিদ্রুপ, অপমান বা তাচ্ছিল্য।

সমালোচনা ও গিবতের পার্থক্য
সমালোচনা যেন গীবত না হয়; এই সতর্কতা ইসলাম বারবার উচ্চারণ করেছে।
রাসুল (সা.) একবার সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন: ‘তোমরা জানো গীবত কী?’ সাহাবারা বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন।’ তিনি বললেন, ‘তোমার ভাইয়ের এমন কিছু বলা, যা সে অপছন্দ করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৯)

তাহলে প্রশ্ন জাগে, একজনের ভুল বলা মানেই কি গীবত? না, বরং এ ক্ষেত্রে ইমাম নববী (রহ.) যেসব ক্ষেত্রে সমালোচনা বৈধ তার একটি রূপরেখা দিয়েছেন। সেটি হচ্ছে- (১) বিচারকের কাছে অভিযোগ করা। (২) ফতোয়া নেওয়ার জন্য পরিস্থিতি বর্ণনা করা। (৩) অন্যায় থেকে কাউকে সাবধান করা। (৪) জনসচেতনতায় অপকারীকে চিহ্নিত করা। (৫) কারো স্পষ্ট গোনাহ বা ফাসিকতা প্রকাশিত হলে তা বলা। (৬) নিজের ও অন্যের অধিকার রক্ষায় ন্যায্য সমালোচনা।

উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে অন্যের অনুপস্থিতিতেও তার ভুলের বিবরণ দেয়া যাবে। তবে সবক্ষেত্রেই চাই হিকমাহ, চাই ভাষার মার্জিত ব্যবহার।

সমালোচনায় আন্তরিক অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ
আমাদের সমালোচনার অন্তর যদি হয়, ‘আমি শ্রেষ্ঠ’, ‘আমিই ঠিক’, কিংবা ‘ওকে ছোট করে আমি বড় হবো’। তাহলে সেটা দম্ভ, যেটা শয়তানি বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু যদি অন্তরে থাকে, ‘আমি তার মঙ্গল চাই’, ‘সে যেন ভালো পথে আসে’। তাহলে সেই সমালোচনা হয়ে ওঠে উপদেশ, হয়ে ওঠে ‘রহমতের ভাষা’।
তাই আসুন, আমরা মুখ খুলি নসিহতের জন্য, হূদয় খুলে দিই ভালোবাসার জন্য, আর রূঢ় সমালোচনা থেকে বিরত থাকি মানুষের সম্মান রক্ষার জন্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক
saifpas352@gmai.com

সর্বশেষ সংবাদ

দাপুটে জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ

সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতে ধারবাহিকভাবে ব্যর্থ বাংলাদেশি ব্যাটাররা। অবশেষে সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসলেন লিটন দাস-শামীম হোসেনরা। তাতে ১৭৭ রানের...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ