ভারতের আহমেদাবাদে বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের সময় বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানের দুর্ঘটনায় ২৭০ জনের মৃত্যুতে স্তব্ধ গোটা ভারত। দুর্ঘটনার পরপরই তৎপর হয়েছে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (১৩ জুন) সব বোয়িং ৭৮৭-৮ ও ৭৮৭-৯ মডেলের বিমানের জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স
বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাম মোহন নাইডু শনিবার (১৪ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘ভারতে বর্তমানে ৩৪টি বোয়িং ৭৮৭ বিমান রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি বিমানে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, বাকি সব বিমানেও দ্রুত পরিদর্শন করা হবে।’
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী, ইঞ্জিনের জ্বালানি ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল সিস্টেম ও টেকঅফ প্যারামিটারসহ একাধিক কারিগরি দিক খতিয়ে দেখা হবে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, তারা নির্দেশনা অনুযায়ী সুরক্ষা পরীক্ষা চালাচ্ছে, তবে এতে কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে দেরি হতে পারে। বিমানের ফ্লাইট চলাচল এখনও স্থগিত করা হয়নি, যদিও সরকার বিকল্প হিসেবে তা বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাতে ব্রিটেনের গ্যাটউইকের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই উচ্চতা হারিয়ে আহমেদাবাদের বিএমসি মেডিকেল কলেজের হোস্টেল ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। মুহূর্তেই আগুনে জ্বলে ওঠে পুরো বিমান।
বিমানে থাকা ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র একজন বেঁচে আছেন। বাকিরা সবাই পুড়ে মারা গেছেন। ঘটনাস্থল থেকে এখন পর্যন্ত ২৭০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বিমানটি কেন দুর্ঘটনার শিকার হলো, তা জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। ইঞ্জিন থ্রাস্ট, ফ্ল্যাপের কাজ, এবং ল্যান্ডিং গিয়ার খোলা থাকার বিষয়গুলোসহ সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
২০২২ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানা থেকে টাটা গোষ্ঠীর হাতে ফিরে আসার পর থেকেই এয়ার ইন্ডিয়া পুনর্গঠনের চেষ্টায় ছিলো। দুর্ঘটনার পর টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা জানতে চাই কী ঘটেছিলো। যদিও এখনও সঠিক তথ্য আমাদের হাতে নেই।’
বেশিরভাগ মরদেহই পুড়ে গেছে, তাই শনাক্তকরণে নেয়া হয়েছে দাঁতের নমুনা ও ডিএনএ পরীক্ষার আশ্রয়। একজন ফরেনসিক চিকিৎসক জানান, এখন পর্যন্ত ১৩৫টি মরদেহের দাঁতের নমুনা নেয়া হয়েছে।
এদিকে স্বজনদের মরদেহ বুঝে পেতে আহমেদাবাদ হাসপাতালের বাইরে অবস্থান করছেন শোকার্ত অন্যান্য স্বজনরা। কেউ বলছেন, ‘আমরা কিছুই জানতে পারছি না’, কেউ আবার ৭২ ঘণ্টার ডিএনএ পরীক্ষার অপেক্ষায় সন্তান হারানোর কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একজন চিকিৎসক বলেন, ‘যারা মৃত, তারা আমাদের বন্ধু, সহকর্মী। আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’