বয়ঃসন্ধিকাল এলেই ব্রণ দেখা দেয়। ১৫-১৬ বছর বয়সে ব্রণ নিয়ে অনেকেরই খারাপ অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু সেই একই বয়সে অনেকেরই কিন্তু ব্রণ হয় না। এদিকে যাদের ব্রণ হয়, তারা ফেসওয়াশ, ওষুধ, খাওয়াদাওয়া কন্ট্রোল করেও কোনো প্রতিকার পান না।
নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, এসব বাহ্যিক কার্যকলাপে ব্রণ কমার সম্ভাবনা সত্যিই কম। এর পেছনে অনেকেই হরমোনকে দায়ী করে থাকেন। কিন্তু এর পেছনে সম্ভবত মূল কারণ মুখের ত্বকে থাকা অদৃশ্য ব্যাকটেরিয়া। এমআইটির গবেষকরা সম্প্রতি এই নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন।
সেল হোস্ট অ্যান্ড মেডিসিন পত্রিকায় প্রকাশিত ওই গবেষণায় জানা গেছে, বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকে থাকা ব্যাকটেরিয়ার ধরন প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা হয়। আর এই ব্যাকটেরিয়াই ব্রণের মূল কারণ।
মুখের ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার রাজত্ব
আমাদের মুখে দুটি ব্যাকটেরিয়া মূলত আধিপত্য বিস্তার করে—‘কিউটিব্যাকটেরিয়াম ব্রণ’ এবং ‘স্ট্যাফিলোকক্কাস এপিডারমিডিস’। অনেক দিন ধরেই এদেরকেই ব্রণ, একজিমার মতো সমস্যার কারণ মনে করা হতো। তবে কবে, কিভাবে এই ব্যাকটেরিয়ারা ত্বকে এসে বাসা বাঁধে, তা স্পষ্ট নয়।
গবেষণায় জানা গেছে, টিনএজ বয়সে ত্বকে তেল উৎপাদন বাড়ে। তখনই নতুন ধরনের ‘কিউটিব্যাকটেরিয়াম ব্রণ’ ব্যাকটেরিয়া এসে ত্বকে বাসা বাঁধতে শুরু করে। তেল, ত্বকের ডেড স্কিনের মিশ্রণ তাদের প্রিয় খাদ্য। ফলে খুব দ্রুত তারা নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। একবার মুখে জায়গা করে নিতে পারলে সেই ব্যাকটেরিয়া বেশ কয়েক বছর রীতিমতো জাঁকিয়ে বসে।
এই বয়সেই কেন
গবেষকরা ৩০ জন কিশোর-কিশোরী ও তাদের ২৭ জন মা-বাবার ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। সেখানে দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় টিনএজারদের মুখে নতুন ‘কিউটিব্যাকটেরিয়াম ব্রণ’ স্ট্রেইনের সংখ্যা অনেক বেশি।
আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মুখে কোনো স্ট্রেইন যদি একবার এসে বাসা বাঁধে, তাহলেই সর্বনাশ। পরে আর সেখানে নতুন কোনো জীবাণু, এমনকি উপকারী ব্যাকটেরিয়াও স্থান পায় না।
এমআইটির গবেষক তামি লিবারম্যান বলেন, যদি এমন কোনো স্ট্রেইন পাওয়া যায়, যা ব্রণ আটকাতে পারে, তাহলে সেটা বয়ঃসন্ধি কালেই আগেভাগে কাজে লাগাতে হবে।
স্ট্যাফিলোকক্কাস এপিডারমিডিস
এই ব্যাকটেরিয়া কিন্তু বেশ যাযাবর গোছের। গবেষণায় দেখা গেছে, ‘স্ট্যাফিলোকক্কাস এপিডারমিডিস’ এর স্ট্রেইন কারো মুখে গড়ে ২ বছর করে থাকে। অদ্ভুত বিষয়টি হলো, একই বাড়িতে অন্য সদস্যদের, অর্থাৎ মা-বাবা, ভাই-বোনের মুখে কিন্তু এই স্ট্রেইন দেখা যায় না। থাকলে একজনেরই মুখে থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর কারণ এখনো পরিষ্কার নয়। তবে সম্ভবত স্কিন কেয়ার, জেনেটিক্স অথবা মুখে থাকা পুরনো উপকারী ব্যাকটেরিয়ার কারণেই নতুন করে এই দুষ্টু ব্রণ নিয়ে আসা ব্যাকটেরিয়া তার মুখে জাঁকিয়ে বসার সুযোগ পায় না। সেই কারণেই একই ঘরে থাকা দুই ভাইয়ের একজনের ব্রণ হলেও অপরজনের সেটা না-ও হতে পারে।
ভবিষ্যতে ব্রণের চিকিৎসায় পরিবর্তন
বর্তমানে ব্রণের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ও রেটিনয়েড ব্যবহার করা হয়। এগুলো অনেকসময় ত্বকে জ্বলুনি, ইরিটেশন তৈরি করে।
গবেষণা বলছে, বয়ঃসন্ধি কালে যদি ঠিক সময়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে ব্রণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে। ইতোমধ্যেই কিছু কম্পানি স্কিন প্রোবায়োটিক নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
সূত্র : আজতক বাংলা