spot_img

মুসলিম ভ্রাতৃত্ব রক্ষায় করণীয়

অবশ্যই পরুন

মুসলিম ভ্রাতৃত্ব মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মহা নিয়ামত। মহান আল্লাহ তাঁর সত্যিকার মুমিনদের এই অপার অনুগ্রহ দান করেন। আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্ব মানে হলো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার আশায় এক আত্মার সঙ্গে আরেক আত্মার মিলন, এক হূদয়ের সঙ্গে আরেক হূদয়ের আন্তরিক সংযোগ।

এই ভ্রাতৃত্বই প্রকৃত ঈমানের সঙ্গী, কারণ ঈমান ছাড়া ভ্রাতৃত্ব হতে পারে না, আর ভ্রাতৃত্ব ছাড়া ঈমানও পূর্ণতা পায় না। যদি কোথাও ঈমানহীন ভ্রাতৃত্ব দেখা যায়, বুঝতে হবে সেটা নিছক স্বার্থের লেনদেন ও পারস্পরিক সুবিধার বিনিময় মাত্র। আর যদি কোথাও ঈমান পাওয়া যায় কিন্তু প্রকৃত ভ্রাতৃত্ব অনুপস্থিত থাকে, তাহলে তা অসম্পূর্ণ ঈমান, যাকে পূর্ণতা দিতে প্রয়োজন আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংশোধনের। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা ঈমান ও ভ্রাতৃত্বকে একসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরাতো পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১০)

সব মুমিন যেন এক আত্মা, যা বিভিন্ন দেহে প্রবেশ করেছে, তারা একে অপরের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে আছে, যেন একটি বৃক্ষের নানা শাখা-প্রশাখা, যা একই মূল থেকে বিস্তৃত। এটি প্রিয় নবী (সা.)-এর বাণীরই বাস্তব রূপ, যেখানে তিনি বলেন, মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পারিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানব দেহের ন্যায় যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয় তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮০)

তাই মুমিনদের উচিত, একে অপরের প্রতি আন্তরিক হওয়া, ভ্রাতৃত্ব রক্ষা করা। ভ্রাতৃত্বের হক আদায় করা। প্রতিটি মুমিনের উপর তার দ্বীনি ভাইয়ের কিছু হক আছে নিম্নে সেগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসা : মুমিনের এই গুণটি তাদের ঈমানকে পূর্ণতা দান করে। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসে, আর আল্লাহর জন্য কারো সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করে এবং আল্লাহর জন্যই দান-খয়রাত করে আবার আল্লাহর জন্যই দান-খয়রাত থেকে বিরত থাকে। সে ঈমান পূর্ণ করেছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৮১)

হিংসা না করা : এক ভাই যেন তার অন্য ভাইয়ের প্রতি অন্তরে কোনো বিদ্বেষ, হিংসা বা ঈর্ষা না পোষণ করে। কারণ, মুমিনের অন্তর থাকে নির্মল। মুমিন হয় পবিত্র আত্মার অধিকারী, তার আত্মা হয় পরিশুদ্ধ, তার হূদয় থাকে নিষ্কলুষ। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, সম্পর্কচ্ছেদ করো না এবং পরস্পর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮৪৯)

কথাবার্তায় সংযত হওয়া : দ্বীনি ভাইয়ের অন্যতম অধিকার হলো, তার সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় তাকে কোনো রকম কষ্ট না দেওয়া। উপহাস, খোটা বা তুচ্ছ না করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ, কোন সম্প্রদায় যেন অপর কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোন নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতইনা নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম। (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১১)

দুর্দিনে পাশে থাকা : মুমিন ভাই বিপদে বা দুশ্চিন্তায় পড়লে, তাকে থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে লোক কোনো মুমিন ব্যক্তির দুনিয়াবী অসুবিধাগুলোর কোনো একটি অসুবিধা দূর করে দেয়, তার পরকালের অসুবিধাগুলোর মধ্যে একটি অসুবিধা আল্লাহ তাআলা দূর করে দিবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৪২৫)

সুপরামর্শ দেওয়া : কারণ মুমিন মুমিনের কল্যাণকামী হয়, আর মুনাফিকরা ধোঁকাবাজ ও প্রতারক প্রকৃতির হয়। তাই মুমিনের উচিত, তার দ্বীনি ভাইকে উত্তম নসিহতের মাধ্যমে সহযোগিতা করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, কল্যাণকামিতাই দ্বীন, কল্যাণকামিতাই দ্বীন, দ্বীন হলো কল্যাণকামিতাই। লোকগণ জিজ্ঞাসা করলেন, কার জন্য, ইয়া রাসুলুল্লাহ? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের এবং তাঁর রাসুলের ও মুসলমানের ইমামদের এবং মুসলিম সাধারণের জন্য।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৪১৯৯)

দোষচর্চা না করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষত্রুটি তালাশ করবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৮০)

ধোঁকা না দেওয়া : নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘..যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দিবে সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮৪)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বীনি ভাইয়ের অধিকারগুলো রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ সংবাদ

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার: এখনই বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ দ্রুত কার্যকরের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশ এখন বাস্তবায়নযোগ্য তা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন,...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ