মানুষের ওপর যেসব কারণে বিপদ আসে, তার অন্যতম হলো, গুনাহ। গুনাহের কারণে জলে স্থলে বিপর্যয় নেমে আসে। তার প্রভাব মানুষের জীবন-যাত্রায় পড়ে। সর্বত্র অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে পড়ে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সুরা রুম, আয়াত : ৪১)
শুধু সতর্ক করেই শেষ করেননি বরং পূর্ববর্তীদের যারা মহান আল্লাহর নাফরমানি করেছে, তাদের পরিণাম কী হয়েছে, তা দেখার জন্য ভ্রমণ করারও নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরের আয়াতেই মহান আল্লাহ বলেছেন, বল, ‘তোমরা জমিনে ভ্রমণ কর। অতঃপর দেখ পূর্ববর্তীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছিল। তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক।’ (সুরা রুম, আয়াত : ৪১-৪২)
তাই মুমিনের উচিত, সব ধরনের গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং গুনাহের কাজে কাউকে সহযোগিতা করা থেকে সতর্ক থাকা। কারণ ইসলামে পরস্পর সহযোগিতার ভিত্তি হলো, তাকওয়া। সত্কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করা জরুরি। তবে গুনাহের কাজে তথা আল্লাহর নাফরমানির কাজে সহযোগতা করা নিষেধ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘সত্কর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আজাব প্রদানে কঠোর।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ২)
গুনাহের কাজে সহযোগিতার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হলো, তা বান্দার আমলনামায় বহু গুণে গুনাহ যোগ করতে থাকে, তার সহযোগিতার কারণে যদি কোনো গুনাহের প্রচলন ঘটে যায়, তাহলে মানুষ যতদিন সে গুনাহে লিপ্ত থাকবে, সাহায্যকারী ততদিন গুনাহে লিপ্ত সব মানুষের গুনাহের সমপরিমাণ গুনাহের ভাগিদার হবে। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি হেদায়েতের দিকে ডাকে, সে তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে এবং তাতে তার অনুসারীদের পুরস্কারে কোনোরূপ ঘাটতি হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করে, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ গুনাহ হয় এবং এতে তার অনুসারীদের পাপের বোঝা কিছুমাত্র কমবে না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২০৬)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি অত্যাচারিত হয়ে খুন হয়, তবে সে খুনের একাংশ (পাপ) আদম (আ.)-এর প্রথম পুত্র (কাবিল)-এর উপর বর্তায়। কেননা সে সর্বপ্রথম খুনের প্রথা প্রচলন করেছিল।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪২৭১)
অতএব, আমাদের সবার দায়িত্ব গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এমন কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কাউকে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকা।