বৃহত্তর শান্তিরক্ষী মিশনের অংশ হিসেবে প্রয়োজন হলে ইউক্রেনে সৈন্য মোতায়েন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তুরস্কও। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের বরাতে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এ তথ্য জানায়।
তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় বিবেচিত হলে, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে একটি মিশনে অবদান রাখার বিষয়টি মূল্যায়ন করা হবে।
তুরস্কের এমন আগ্রহের কথা জানা গেল তখনই, যখন ইউক্রেন ও ইউরোপের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার উপায় খুঁজে বের করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলদিমির জেলেনস্কিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা ব্রাসেলসে সাক্ষাৎ করেছেন।
কারণটা খুবই স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিয়েভে সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য প্রদান স্থগিত করেছেন। এমন অবস্থায় ইউরোপের সবদেশকে একত্রিত হয়ে সাহায্যের হাত বাড়াতে বলেছেন জেলেনস্কি।
তবে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কিয়েভকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জার্মান ভিত্তিক থিংকট্যাংক কিয়েল ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, গেল তিন বছরে কিয়েভের পেছনে প্রায় ১২০ বিলিয়ন ডলার ঢেলেছে ওয়াশিংটন। যার সিংহভাগই গেছে সামরিক সহায়তা খাতে। পরিসংখ্যান বলছে- এ পর্যন্ত ইউক্রেনকে আনুমানিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার কিয়েভের কাধ থেকে পুরোপুরি হাত উঠে গেল ওয়াশিংটনের। যা গেম চেঞ্জার হিসেবে ধরা দেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে। বিশ্লেষকদের মত- পর্যাপ্ত অস্ত্র সহায়তা না পাওয়ায় সক্ষমতা হারাবে জেলেনস্কি বাহিনী। রুশ সেনাদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিন-চারমাস টিকতে পারবে ফ্রন্টলাইনে।
ইউক্রেনীয় সামরিক বিশেষজ্ঞ মিকোলা বিলিয়েসকভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ইউক্রেন তিন থেকে চার মাস টিকে থাকতে পারবে; খুব বেশি হলে তা ছয় মাস পর্যন্ত গড়াতে পারে। কিন্তু, ক্ষেপণাস্ত্র বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিস্ফোরকের ক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে হতে পারে। কেননা, প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেমের বিস্ফোরক তৈরির সক্ষমতা ইউরোপের নেই। এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্রই পারবে।
তবে, বিশাল এই শূন্যস্থান কি পূরণ করতে পারবে ইউরোপ? এমন প্রশ্নের বিপরীতে বিশ্লেষকদের উত্তর নেতিবাচক।ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টার প্রধান নির্বাহী ফাবিয়ান জুলিগ বলেন, ইউরোপের জন্য এই শূন্যস্থান পূরণ করা কষ্টকর। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য পারমাণবিক শক্তিধর হলেও তারা যথেষ্ট নয়। অবশ্যই এখানে আরও বৃহত্তর জোটের দরকার।
ইউক্রেনের সরকারি তথ্য বলছে— দেশটির প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্রের ৪০ শতাংশই তৈরি হয় কিয়েভে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৩০ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। আর বাকি ৩০ শতাংশ আসে অন্যান্য ইউরোপীয় মিত্রদের থেকে।
এমন অবস্থায় তুরস্কের তরফ থেকে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানো নিঃসন্দেহে ভালো সংবাদ জেলেনেস্কির জন্য; তবে পুতিনের জন্য নয়।