spot_img

সীমাহীন জ্বালানির সন্ধান পেয়েছে চীন

অবশ্যই পরুন

সীমাহীন এক জ্বালানির উৎসের সন্ধান পেয়েছে চীন। জ্বালানিটির নাম থোরিয়াম। এই জ্বালানি দিয়ে তারা ৬০ হাজার বছর চলতে পারবে।  ইজিংয়ে ভূবিজ্ঞানীরা এমন দাবি করেছেন।  এ খবর দিয়ে অনলাইন ডেইলি মেইল বলছে, চীনের ইনার মঙ্গোলিয়ায় বায়ান ওবো খনিজ কমপ্লেক্সে পাওয়া গেছে পর্যাপ্ত পরিমাণ থোরিয়াম। এটি এতটা বেশি যে, তা দিয়ে চীনাদের প্রতিটি বাড়িতে ‘চিরদিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

থোরিয়াম একটি নিউক্লিয়ার ফুয়েল যা বিশেষভাবে পরমাণু শক্তির উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। থোরিয়ামকে অনেকেই পরমাণু শক্তির ভবিষ্যত হিসেবে বিবেচনা করেন, কারণ এটি ইউরেনিয়ামের তুলনায় কম বিপজ্জনক এবং এর ব্যবহারে পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকে।

চীনের ইনার মঙ্গোলিয়ায় পাওয়া থোরিয়াম থেকে শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব হলে এটি পরমাণু শক্তির বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী একটি উৎস হতে পারে এবং পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে এটি আরও নিরাপদ হতে পারে।

এই ধরনের একটি উৎস যদি সত্যিই পাওয়া যায়, তবে এটি চীনকে শক্তির ক্ষেত্রে প্রায় আত্মনির্ভরশীল করতে পারে, কারণ থোরিয়ামের মজুত দীর্ঘকাল ধরে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। চীন এই প্রযুক্তি ও থোরিয়াম ফুয়েল ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠলে এটি বিশ্বব্যাপী শক্তির বাজারে একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে।

তবে, থোরিয়াম শক্তির ব্যবহার এখনও বেশ পরীক্ষামূলক এবং এর পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক ব্যবহার এখনও অনেক দূরে। এর জন্য ব্যাপক প্রযুক্তিগত উন্নতি, পরীক্ষা এবং নিরাপত্তার মান তৈরি করা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, থোরিয়াম হালকা মাত্রার একটি তেজষ্ক্রিয় পদার্থ। এটা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে। এর নাম হবে মল্টেন-সল্ড রিঅ্যাকটর। তা থেকে আসবে অসীম পরিমাণ বিদ্যুৎ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি ওই খনি থেকে পুরোটা থোরিয়াম উত্তোলন করা যায় তাহলে তার পরিমাণ হবে ১০ লাখ টন। দ্য সাউথ চায়না পোস্ট প্রকাশিত হয়ে পড়া একটি রিপোর্ট উল্লেখ করে এ তথ্য দিয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ওই খনিতে থোরিয়ামের উৎস এখন পর্যন্ত অস্পৃশ্য অবস্থায় আছে। এটা যথাযথভাবে উত্তোলন করা গেলে তা সারাবিশ্বের জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতার ইতি ঘটাবে। গবেষকরা আরো দাবি করেছেন যে, ইনার মঙ্গোলিয়ার একটি লোহার আকরিকের খনি থেকে ৫ বছরে যে বর্জ্য হিসেবে খনিজ পাওয়া যাবে, তাতে যে পরিমাণ থোরিয়াম থাকবে, তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে এক হাজার বছরের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব। উল্লেখ্য, এই খবরটি এমন এক সময়ে এলো যখন চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পাওয়ার সোর্স সন্ধান করছে। গবেষণায় পুরো চীনে ২৩৩ টি থোরিয়াম সমৃদ্ধ অঞ্চলের সন্ধান মিলেছে। যদি এ কথা সত্য হয়, তাহলে চীনে যে পরিমাণ থোরিয়াম জমা আছে, তা আগের হিসাবকে অনেকটাই ছাড়িয়ে যাবে। প্রচলিত পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহৃত হয় ইউরেনিয়াম-২৩২। তার চেয়ে কমপক্ষে ৫০০ গুণ বেশি থোরিয়াম জমা আছে। ফলে চীনের মুখে হাসির রেখা দেখা দিয়েছে।

থোরিয়ামের ব্যবহার:

থোরিয়াম একটি উর্বর উপাদান, যা নিজে থেকে ফিশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করতে পারে না। তবে, এটি ফিশন বিক্রিয়ার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। থোরিয়াম যখন নিউট্রনের সঙ্গে সংঘর্ষে আসে, তখন এটি ইউরেনিয়াম-২৩৩ তে পরিবর্তিত হয়। ইউরেনিয়াম-২৩৩ পরবর্তীতে ফিশন বিক্রিয়া শুরু করে, যা থেকে প্রচুর পরিমাণে শক্তি ও নিউট্রন উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে থোরিয়ামকে শক্তি উৎপাদনের একটি কার্যকর উৎস হিসেবে ব্যবহৃত করা যায়।

মল্টেন সলিড রিঅ্যাকটর:

থোরিয়াম ব্যবহার করার অন্যতম আধুনিক পদ্ধতি হলো মল্টেন সলিড রিঅ্যাকটর (MSR)। এই রিঅ্যাকটরে, থোরিয়াম মিশ্রিত হয় লিথিয়াম ফ্লোরাইডের মতো রাসায়নিকের সঙ্গে এবং তাপমাত্রা প্রায় ১৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়। এই উত্তপ্ত মিশ্রণ নিউট্রনের সঙ্গে সংঘর্ষে এসে ইউরেনিয়াম-২৩৩ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে, যা শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ফিশন বিক্রিয়া চালায়।

অসীম শক্তি উৎপাদন:

যেহেতু এই প্রক্রিয়ায় নিউট্রন উৎপাদন হয় এবং তারা আরও থোরিয়ামের সঙ্গে বিক্রিয়া করে, তাই এটি একধরণের চক্র তৈরি করে। এতে উৎপন্ন শক্তি বেশ দীর্ঘস্থায়ী এবং শক্তির সরবরাহ সীমাহীন হয়ে উঠতে পারে, যা একটি দীর্ঘমেয়াদী শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করতে সক্ষম।

থোরিয়ামের সুবিধা:

পরমাণু দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম: থোরিয়াম থেকে শক্তি উৎপাদন পারমাণবিক শক্তির তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ, কারণ থোরিয়াম তার ফিশন প্রক্রিয়ায় ইউরেনিয়ামের তুলনায় অনেক কম তেজষ্ক্রীয় বর্জ্য তৈরি করে।

নিরাপদ বর্জ্য: থোরিয়ামের পারমাণবিক শক্তির উৎপাদনে যে বর্জ্য তৈরি হয় তা ইউরেনিয়ামের তুলনায় অনেক কম তেজষ্ক্রিয় এবং এর অর্ধায়ু অনেক ছোট, যা নিরাপত্তা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সহজ করে।
এভাবে থোরিয়াম একটি সম্ভাবনাময় শক্তির উৎস হতে পারে, বিশেষ করে এর নিরাপত্তা এবং দীর্ঘস্থায়ী শক্তির উৎপাদন ক্ষমতা থেকে এটি ভবিষ্যতের শক্তির চাহিদা মেটাতে কার্যকর হতে পারে। তবে, থোরিয়াম ভিত্তিক শক্তির প্রযুক্তি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, এবং এর বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য আরও উন্নয়ন এবং গবেষণা প্রয়োজন।

সর্বশেষ সংবাদ

ধৈর্য ও সংযমের মাধ্যমে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে দেশবাসীসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এক...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ