spot_img

সরকারি কেনাকাটার প্রক্রিয়া ৩ শক্তির চক্রে জিম্মি: টিআইবি

অবশ্যই পরুন

সরকারি কেনাকাটার প্রক্রিয়া তিনটি শক্তির চক্রে জিম্মি বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এই তিন শক্তি হলো— আমলাতন্ত্র, ক্রয়পক্ষ ও রাজনৈতিক ঠিকাদার। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশে সরকারি ই-কেনাকাটায় বাজার দখল, যোগসাজশ এবং রাজনৈতিক প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

সংস্থাটি জানায়, প্রতি বছর বাজেটের ২৭ শতাংশ অর্থ, এই কেনাকাটার দুর্নীতি ও অপচয়ে ব্যয় হয়।

বাংলাদেশের সরকারি ক্রয় খাতে বাজার দখল, অনিয়ম এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কারণে যে দুর্নীতি হয়েছে, তারই একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টিআইবি। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জানান, আমাদের গবেষণায় তিনটি বিষয় ছিল। প্রথমত, ২০১২-২০২৪ পর্যন্ত ই-জিপির মাধ্যমে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ ১০ মন্ত্রণালয় প্রায় ৯২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। যা ৫ লাখ ৪০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। আর এসব মন্ত্রণালয়ের ৬১ শতাংশ কার্যাদেশই গেছে ৫ শতাংশ ঠিকাদারের হাতে। অর্থাৎ, এখানে রয়েছে সংঘবদ্ধ চক্র।’

সরকারি এই কেনাকাটায় বাজার দখল হয়েছে জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দশটি মন্ত্রণালয়ের গড়ে ৬১ শতাংশ কার্যাদেশ ৫ শতাংশ ঠিকাদার নিয়ন্ত্রণ করেন। মন্ত্রণালয় ভেদে এই নিয়ন্ত্রণের হার ৭৪-৮৪ শতাংশ। অন্যদিক থেকে নিম্নপর্যায়ের ১০ শতাংশ ঠিকাদার গড়ে ১ শতাংশের কম কার্যাদেশ পান।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই ক্রয় খাত সবচেয়ে দুর্নীতিপ্রবণ খাত। তবে সব দেশেই সেটি নিয়ন্ত্রণ হয়। কিন্তু আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রণ হয় না, বরং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি আমরা। তারই একটি চিত্র আমরা আজকে তুলে ধরলাম।’

তিনি বলেন, ‘একক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নীতিমালার ফাঁক ফোকর দিয়ে যৌথ মালিকানার ঠিকাদারি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যে কারণে যৌথ মালিকানার নামে একক কর্তৃত্ব আরও গভীর হয়েছে।’

সরকারি কেনাকাটায় যোগসাজশে দুর্নীতি হয় উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বা মন্ত্রণালয়ে নেতৃত্বের পরিবর্তন হলে দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সব জায়গায় ঠিকাদারের হাতবদল হয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ সেই একই মাত্রায় রয়ে গেছে। সার্বিকভাবে সরকারি ক্রয় খাত নিয়ন্ত্রিত অবস্থা ও জিম্মিদশায় আছে। যখন হাতবদল হয়, তখন নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকে, কিন্তু হাতবদল হয়।’

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে সরকারি ই-কেনাকাটায় বাজার দখল, যোগসাজশ এবং রাজনৈতিক প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদন তুলে ধরেন টিআইবির আউটরিচ ও কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তার সঙ্গে এই গবেষণায় অংশ নেন সংস্থাটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, ডাটা ভিজুয়ালাইজেশন বিভাগের সহকারী কো-অর্ডিনেটর রিফাত রহমান ও কে এম রফিকুল আলম।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালে ই-জিপি চালুর পর থেকে এ ব্যবস্থার মাধ্যমে ৫,৯৬,৯২১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে, সর্বোচ্চ অনুমোদিত চুক্তির মূল্য ৮৮১ কোটি টাকা হলেও এর চেয়ে বড় চুক্তিগুলো এখনও এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনা হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতার প্রবণতা রয়েছে। শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার মোট প্রকল্পমূল্যের ৬১.৩১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে, যেখানে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ ঠিকাদারদের দখলে রয়েছে মাত্র ১ শতাংশেরও কম বাজার।

বিশেষ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার মোট প্রকল্পমূল্যের ৭৪.৯৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া, গত এক দশকে শীর্ষ ঠিকাদারদের বাজার দখলের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ (আরটিএইচডি): মাত্র ১১ শতাংশ ঠিকাদার ৯৩.৫৫ শতাংশ প্রকল্পমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে। ১ শতাংশ ঠিকাদারই ৭২.৯ শতাংশ বাজার দখল করেছে। এই বিভাগে ৯টি বড় ঠিকাদারি নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়: ৯ শতাংশ ঠিকাদার মোট প্রকল্পমূল্যের ৯১.৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। মাত্র ৩৮ জন ঠিকাদার ৩০.৯ শতাংশ বাজার দখল করেছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়: ৭.৪৫ শতাংশ ঠিকাদার ৭১ শতাংশ বাজার শেয়ার নিয়ন্ত্রণ করছে। ৮১ জন ঠিকাদার ৩২.৩২ শতাংশ বাজারের মালিক।

স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিডি): ৯.৭৪ শতাংশ ঠিকাদার মোট প্রকল্পমূল্যের ৬২.৮৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। মাত্র ১ শতাংশ ঠিকাদার (২৯৪ জন) ২৭.৭ শতাংশ বাজার দখল করেছে।

টিআইবির গবেষণায় দেখা যায়, শীর্ষ ঠিকাদাররা যুগ্ম উদ্যোগ (জেভি) গঠন করে বড় প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে তাদের বাজার দখল আরও বেশি হয়। এ ছাড়া, রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তনের ফলে শীর্ষ ঠিকাদারদের আধিপত্য বদলে যায়। তবে নিয়ন্ত্রণ একই থাকে।

গবেষণা প্রতিবেদনের সরকারি ই-প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) কাছে বেশকিছু সুপারিশ জানায় টিআইবি।

সেগুলো হলো—

যুগ্ম উদ্যোগ (জেভি) ফার্মগুলোর কার্যক্রম কঠোরভাবে পর্যালোচনা করা: স্বাধীন পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে ঠিকাদারদের যোগসাজশ ও বাজার দখলের প্রবণতা রোধ করা।

একক ঠিকাদার সক্ষম হলে জেভি সীমিত করা: যে ঠিকাদার এককভাবে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম, তাকে জেভি গঠনের অনুমতি না দেওয়া।

বাজার দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া: ঠিকাদারদের জন্য বাজার শেয়ারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা: সরকারি ক্রয় ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মানের নিয়মনীতি ও প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা।

প্রকৃত মালিকানা তথ্য প্রকাশ করা: পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস সংশোধন করে সকল কোম্পানি ও জেভির প্রকৃত মালিকানা তথ্য উন্মুক্ত করা।

উচ্চমূল্যের চুক্তি ই-প্রকিউরমেন্টের আওতায় আনা: ই-জিপি প্ল্যাটফর্মের বাইরে থাকা উচ্চমূল্যের প্রকল্পগুলোকে ই-টেন্ডারিং প্রক্রিয়ায় আনা।

সর্বশেষ সংবাদ

‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

হজযাত্রাকে সহজ ও নিরাপদ করতে ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ চালু করে হজযাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড....

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ