spot_img

মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার

অবশ্যই পরুন

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শরীরের স্বাভাবিক নড়াচড়া অনেকটাই স্বাভাবিক বলে ধরে নিই। তবে, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটি হয়ে উঠতে পারে ভয়ানক এক চ্যালেঞ্জ। মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার এমন একটি অবস্থা, যেখানে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়, যা তাদের জীবনের গুণগত মানকে নষ্ট করে দেয়।

মুভমেন্ট ডিসঅর্ডারের ধরন ও লক্ষণ :

মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার অনেক ধরনের হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য :

অ্যাটাক্সিয়া: শরীরের ভারসাম্য এবং সমন্বয়ের অভাব, যা হাঁটা বা দাঁড়ানোর সময় সমস্যা সৃষ্টি করে।

রাইটারস ক্র্যাম্প : লেখার সময় হাতের পেশিতে টান, পেশাগত জীবনে জটিলতা তৈরি করে।

ওরোম্যান্ডিবুলার ডিসটোনিয়া : মুখ ও চোঁয়ালের অস্বাভাবিক সংকোচন, যা খাওয়া-দাওয়া বা কথা বলার সমস্যা সৃষ্টি করে।

সাইকোজেনিক মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার : মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে শরীরের অস্বাভাবিক নড়াচড়া।

গেইট ডিসঅর্ডার: হাঁটার ধরনে অস্বাভাবিকতা, যা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

ডিসকাইনেশিয়া: অনিয়ন্ত্রিত এবং অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া।

ড্রাগ-প্ররোচিত মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার : কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে শরীরের নড়াচড়ায় অস্বাভাবিকতা।

কোরিয়া এবং মাইকোলোনাস : শরীরের বিভিন্ন অংশে হঠাৎ অস্বাভাবিক এবং দ্রুতগতির নড়াচড়া।

ঝাঁকুনি নড়াচড়া : আকস্মিক ও অনিয়মিত নড়াচড়া, যা দৈনন্দিন কাজে বাধা সৃষ্টি করে।

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?

মুভমেন্ট ডিসঅর্ডারের উপসর্গগুলো প্রাথমিক অবস্থায় অনেক সময় অবহেলিত থাকে। কিন্তু নিচের যে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি :

শরীরের যে কোনো অঙ্গের অস্বাভাবিক নড়াচড়া বা নিয়ন্ত্রণহীনতা। দীর্ঘদিন ধরে হাতে বা পায়ে কম্পন, যা স্বাভাবিক কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি করে। হাঁটার সময় ভারসাম্যহীনতা বা হঠাৎ পড়ে যাওয়ার প্রবণতা। মুখমন্ডল বা চোয়ালের অস্বাভাবিক সংকোচন। নির্দিষ্ট ওষুধ সেবনের পর শরীরের অস্বাভাবিক নড়াচড়া শুরু হওয়া।

আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি : মুভমেন্ট ডিসঅর্ডারের চিকিৎসায় আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। চিকিৎসার ধরন রোগের প্রকৃতি ও গুরুত্বর ওপর নির্ভর করে।

ওষুধপ্রয়োগ : পারকিনসন্স ডিজিজ বা ডিসটোনিয়ার জন্য বিশেষ ওষুধ ব্যবহৃত হয়।

বোটুলিনাম টক্সিন থেরাপি (Botox Therapy) : ডিসটোনিয়া বা স্প্যাজমের চিকিৎসায় কার্যকর।

ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন (Deep Brain Stimulation) : সার্জারি পদ্ধতির মাধ্যমে মস্তিষ্কে ইলেকট্রিক্যাল ইমপালস প্রেরণ করে অস্বাভাবিক নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

ফিজিক্যাল থেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন : শরীরের পেশির শক্তি ও সমন্বয় বাড়াতে সহায়ক।

মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা : সাইকোজেনিক মুভমেন্ট ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে মানসিক পরামর্শ ও থেরাপি অপরিহার্য।

বাংলাদেশে চিকিৎসার সুযোগ : বাংলাদেশে মুভমেন্ট ডিসঅর্ডারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে অগ্রগতি হচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য বড় শহরের বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিউরোলজিস্ট এবং ফিজিক্যাল থেরাপিস্টের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। চ্যালেঞ্জ : সচেতনতার অভাব, সঠিক রোগ নির্ণয় না হওয়া এবং উন্নত চিকিৎসার খরচের কারণে অনেক রোগী সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত।

উপসংহার : মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার এমন একটি শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ, যা শুধু রোগীর নয়, পরিবারের জীবনযাত্রার ওপরও প্রভাব ফেলে।

মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার ভীতিকর শোনালেও সময়মতো চিকিৎসা নিলে এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। আধুনিক সরঞ্জাম এবং দক্ষ চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়াতে সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ বাড়াতে হবে। তাই এ বিষয়ে আমাদের আরও যত্নবান হতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক (ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ সংবাদ

মালয়েশিয়ায় জাকির নায়েকের প্রকাশ্যে বক্তব্য দেয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

ভারতীয় ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা ড. জাকির নায়েকের প্রকাশ্যে বক্তৃতা দেয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে মালয়েশিয়া। ২০১৯ সালে সাময়িকভাবে তাকে...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ