ইবাদত নিয়ে অহংকার অত্যন্ত নিন্দনীয়। ইবাদত নিয়ে অহংকার দুইভাবে হয়ে থাকে। এক. ইবাদত করে তা নিয়ে অহমিকা প্রদর্শন করা। দুই. ইবাদত না করার মাধ্যমে অংহকার।
রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতের বেলা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ইবাদত করতেন। অথচ তাঁর অতীত-ভবিষ্যতের সব পাপ মাফ করে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আয়েশা (রা.)-এর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? (বুখারি, হাদিস : ৪৮৯৭)
ফেরেশতারা দিন-রাত আল্লাহর ইবাদত করে। কিন্তু তারা এজন্য অহংকার করে না। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই (নৈকট্যশীল ফেরেশতারা) যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে থাকে, তারা তাঁর ইবাদতে অহংকার করে না। তারা তাঁর গুণগান করে ও তাঁর জন্য সিজদা করে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ২০৬)
যারা ইবাদত করা থেকে অহংকার করে, তাদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আমাদের আয়াত সমূহকে মিথ্যা বলে ও তা থেকে অহংকার করে, তাদের জন্য আকাশের দরজা সমূহ উন্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না সূঁচের ছিদ্রপথে উষ্ট্র প্রবেশ করে। এভাবেই আমরা অপরাধীদের শাস্তি প্রদান করে থাকি।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৪০)
অহংকার দুভাবে হয়। অন্তরে ও বাহিরে। অন্তরের অহংকার আল্লাহ দেখেন। যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক। আমি তাতে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদত থেকে অহংকার করে। তারা সত্বর জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়।’ (সুরা মুমিন/গাফের, আয়াত : ৬০)
এখানে ইবাদত অর্থ দোয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সকল কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি, হাদিস : ১)
বাহিরের অহংকার প্রকাশ পায় কথায় ও কর্মে। যেমন অহংকারীদের বাহ্যিক আচরণ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদের বলা হতো, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তখন তারা ঔদ্ধত্য দেখাতো।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত : ৩৫)
আর কর্মে অহংকারী হলো লোক দেখানো ইবাদতকারীরা। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করে। আর তিনিও তাদের ধোঁঁকায় নিক্ষেপ করেন। যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় এবং আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। এরা দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। না এদিকে, না ওদিকে। আসলে আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি তার জন্য কোন পথই পাবে না।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৪২-১৪৩)
তিনি বলেন, ‘আর তাদের অর্থ ব্যয় কবুল না হওয়ার এছাড়া কোন কারণ নেই যে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাসী। আর তারা ছালাতে আসে অলস অবস্থায় এবং তারা অর্থ ব্যয় করে অনিচ্ছুক ভাবে’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৫৪)
বুঝা যায়, আল্লাহর কাছে এদের স্থান কাফিরদেরও নীচে। এসব লোকদের সালাত-সিয়াম, হজ, জাকাত সবকিছু বৃথা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমরা সেদিন তাদের কৃতকর্মের দিকে মনোনিবেশ করব। অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ২৩)