spot_img

ফিলিস্তিন রক্ষায় প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন

অবশ্যই পরুন

৮ ডিসেম্বর ১৯১৭। ফিলিস্তিনে ৪০১ বছরের উসমানীয় শাসনের অবসান হয়। পবিত্র এই ভূমির শাসন চলে যায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের হাতে। শুরু হয় ইহুদি রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার নীলনকশা। পৃথিবীর নানাপ্রান্ত থেকে ইহুদিরা সমবেত হতে থাকে ফিলিস্তিন ভূমিতে। ব্রিটিশ শাসকদের ছত্রছায়ায় তারা নানা কৌশলে ফিলিস্তিনি ভূমি কব্জা করতে থাকে। ফিলিস্তিনিদের কাছে বিষয়টি ক্রমেই তাদের বিষয়টি স্পষ্ট হয় এবং তারা নানাভাবে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে।

তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৩১ সালে জেরুজালেমে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড ইসলামিক কংগ্রেস’। যাতে সারা বিশ্বের মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও নেতারা অংশগ্রহণ করে। এটা ছিল ফিলিস্তিন রক্ষার প্রথম বৈশ্বিক আন্দোলন। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিন সমস্যাটি আরব ও মুসলিম বিশ্বের সংকট হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। ঐতিহাসিক এই সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন মুফতি হাজি আমিন আল হুসাইনি (রহ.)। তিনি ছিলেন জেরুজালেমের প্রধান মুফতি এবং ব্রিটিশ পৃষ্ঠপোষকতায় ইহুদি বন্দোবস্তের অন্যতম প্রতিবাদকারী।

tt

১৯৩০ থেকে ১৯৪০ দশকের শেষভাগ পর্যন্ত তিনি যেভাবে ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিবাদ করেছিলেন তা আজও ইতিহাসে বিখ্যাত। এই সম্মেলনের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন ভারতীয় মুসলিম নেতা মাওলানা মোহাম্মদ আলী জওহর (রহ.)। ফিলিস্তিনিদের সারা বিশ্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের অন্যতম রূপকার ছিলেন লেখক ও রাজনীতিক মাওলানা মোহাম্মদ আলী (রহ.)। যিনি ১৯০৬ সাল থেকে ভারতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে ভারতীয়দের আলোচনায় প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি উপমহাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন খেলাফত আন্দোলনের জন্য।

এই আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তুরস্কের উসমানি খেলাফত রক্ষা দাবিতে; প্রকৃতপক্ষে যা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনই ছিল। কিন্তু সম্মেলন আয়োজনের আগেই তিনি ৪ জানুয়ারি ১৯৩১ লন্ডনে মারা যান। মাওলানা মোহাম্মদ আলী (রহ.)-এর মৃত্যুর সংবাদ শুনে মুফতি হুসাইনি (রহ.) তাঁর ভাই মাওলানা শওকত আলীকে টেলিগ্রাম করেন। যাতে তিনি মাওলানা মোহাম্মদ আলী (রহ.)-কে আল আকসা মসজিদের আশেপাশে কবর দেওয়ার আহ্বান জানান।

মাওলানা শওকত আলী (রহ.) নিজেও ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। ২৩ জানুয়ারি ১৯৩১ মাওলানা মোহাম্মদ আলী (রহ.)-এর কফিন জেরুজালেমে পৌঁছায়। কয়েক হাজার ফিলিস্তিন অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে তা নিয়ে মসজিদুল আকসা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়। কুব্বাতুস সাখরার পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। জানাজার সময় মুফতি হুসাইনি (রহ.) মাওলানা মোহাম্মদ আলীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন মিসরের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ আহমদ জাকি পাশা এবং তিউনিসিয়ার জাতীয়বাদী আন্দোলনের নেতা আবদেল আজিজ থালবি। এমনকি একজন আরব খ্রিস্টান কবি মোহাম্মদ আলী (রহ.)-এর স্মরণে কবিতা পাঠ করেন। এ সময় মাওলানা শওকত আলী (রহ.) ফিলিস্তিনে আবারো একটি আন্তর্জাতিক মুসলিম সম্মেলন আয়োজন করার অনুরোধ করেন। যা মুফতি হুসাইনি (রহ.) আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেন।

কেননা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ফিলিস্তিনের প্রতি মুসলিম বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণের এটাই সুযোগ। মাওলানা শওকত আলীর লক্ষ্য ছিল ইসলামী খেলাফতের পুনরুদ্ধার করা এবং তিনি এই লক্ষ্য নিয়ে সুলতান দ্বিতীয় আবদুল মজিদের সঙ্গে দেখাও করেন। অন্যদিকে মুফতি হুসাইনি (রহ.) চাচ্ছিলেন ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমর্থন গড়ে তোলা। সুলতানের সম্মতিতে এবং মুফতি হুসাইনি ও শওকত আলীর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনের কাজ এগিয়ে যায়।

তুর্কি প্রজাতন্ত্রের সরকার ফ্রান্সকে অনুরোধ করে যেন সুলতান ফিলিস্তিনে আসতে না দেয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের চাপে মুফতি হুসাইনি (রহ.) ঘোষণা করেন সম্মেলনে খলিফা নির্বাচন করা হবে না। ব্রিটিশরা সম্মেলনের অনুমতি দিলেও সুলতান দ্বিতীয় আবদুল মজিদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে। ৭ ডিসেম্বর ১৯৩১ সালে সম্মেলন শুরু হয়। তাতে ২২টি দেশের ১৩০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। যাদের মধ্যে ছিলেন লেবাননের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী রিয়াদ আল সোলহ, সিরিয়ার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট শুকরি আল কুওয়াতলি। মিসরের ইসলামী চিন্তাবিদ রশিদ রিদা, ভারতের দার্শনিক ও কবি মুহাম্মদ ইকবাল। তারা মহাসমারোহে ফিলিস্তিনে আগমন করেন। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন মুফতি হুসাইনি (রহ.)। সম্মেলনে মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ রক্ষায় একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। অংশগ্রহণকারীরা শপথ নেন সর্বশক্তি দিয়ে পবিত্র স্থানগুলো রক্ষা করা হবে। তারা ইহুদিবাদীদের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান।

পাশাপাশি ফিলিস্তিনের প্রতি মুসলিম বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এবং ফিলিস্তিনকে মুসলিম বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব জেরুজালেম প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। ফিলিস্তিনিদের ভূমি কিনতে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তও হয়। ১৪ ডিসেম্বর গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন আল্লামা ইকবাল (রহ.)। যাতে তিনি পুঁজিবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদীদের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন এবং উপস্থিত নেতাদের সারা বিশ্বে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বাণী ছড়িয়ে দিতে আহ্বান জানান।

মিডলইস্ট আই অবলম্বনে

সর্বশেষ সংবাদ

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা

বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে কমিশনকে অবশ্যই সফল হতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ