রাহুল গান্ধির সাথে নেইমারের পার্থক্য-মিল কোথায়? অনেক পার্থক্য অবশ্য রয়েছে। মূলত, দু’জন দুই জগতের। একজন রাজনীতিবিদ আরেকজন খেলোয়াড়। নেইমার বিপক্ষ দলের রক্ষণভাগের সামান্য ট্যাকেলেই বিরাট ভুক্তভোগী বনে যান। অপরদিকে, রাহুল যেন ‘শক্তিমান’ ও ‘নন্দ ঘোষ’ এই দুটির মিশ্রিত চরিত্র। তার সামান্য ধাক্কায় মানুষ আইসিইউতে যায়, তার গলার আওয়াজে কেউ অনিরাপদ বোধ করেন। আবার এই মহাশক্তিশালী লোকটিই কয়েকমাস আগে ছিলেন ‘পাপ্পু’- যেটিকে নাবালক অর্থে ব্যবহার করা হয়।
ফুটবল মাঠে দেখা যায় প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের সামান্য একটু ট্যাকেলেই কুপোকাত হয়ে পড়ে যাচ্ছেন বিপক্ষ দলের স্ট্রাইকার কিংবা মিডফিল্ডাররা। তাদের বাধা দেয়ার কারণ থাকে সেই স্ট্রাইকার যাতে গোল দিতে না পারে। আবার কিছু স্ট্রাইকারদের দেখা যায় এই পড়ে যাওয়ার প্রবণতা একটু বেশিই। এই যেমন, ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড় নেইমার জুনিয়র। সামান্য বাধাতেই নেইমারকে আমরা দেখি একাধিক ডিগবাজি দিয়ে মাঠে গড়াগড়ি খেতে। এবার নেইমারের একটি বিপরীত চরিত্র কল্পনা করুন। সেই চরিত্র হলো নন্দ ঘোষ। তিনি যাই ই করছেন এবার তা নেতিবাচক মার্কেটিংয়ে তাকে আলোচনায় নিয়ে আসছে। নেইমারের মতো পড়ে গিয়ে সহানুভূতি দূরে থাক, সবকিছুতেই দোষ হচ্ছে তার।
ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধির অবস্থাটা হয়েছে সেই নন্দ ঘোষের মত। তিনি নেইমার নন। উল্টো তার সামান্য অ্যাকশন বুমেরাং হয়ে তাকেই বিদ্ধ করছে। সাম্প্রতিক দুটি ঘটনার সাথে এর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
এক. ভারতীয় পার্লামেন্টের বাইরে এক সংসদ সদস্য অভিযোগ আনেন রাহুল গান্ধি তাকে আঘাত করেছেন। এই ঘটনায় রাজ্যসভার এক এমপি মাটিতে পড়ে যান। এতে গুরুতর আহত হন বলেও জানায় ভারতীয় মিডিয়া। এমনকি এই গল্প গিয়ে ঠেকে আইসিইউতে। এখন কথা হলো যদি সত্যি কেউ ‘ধাক্কা’ দিয়েও থাকে, সেই ধাক্কার জন্য আইসিইউতে! রাহুল গান্ধি তাহলে বক্সিংয়ে ভারতকে একটা স্বর্ণপদক এনে দিতেই পারেন।
দুই. এই ইস্যু যেতে না যেতেই নতুন আরেক ইস্যুর আগমন ঘটে। নাগাল্যান্ডের এক নারী সংসদ সদস্য অভিযোগ আনেন রাহুল গান্ধির নামে। তার অভিযোগ সংক্ষিপ্ত করে বললে বিষয়টা এমন, রাহুল ইচ্ছাকৃতভাবে কথা ও শরীরী ভাষায় তার সাথে অশালীন আচরণ করেছেন।
এখন দুটি ঘটনা সামান্য বিশ্লেষণ করা যাক। প্রথমেই দ্বিতীয় ঘটনা। ফাংগন কোনিয়াক নামে মেঘালয়ের এক নারী এমপি বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে বলেন, আমি নাগাল্যান্ডের এসটি সম্প্রদায় থেকে এসেছি ও আমি একজন নারী সদস্য। রাহুল গান্ধি আমার মর্যাদা এবং আত্মসম্মানকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। তিনি আমার কাছাকাছি এসে এতটা কম দূরত্বে দাঁড়িয়েছিলো যা আমার অস্বস্তির কারণ হচ্ছিলো। একই সাথে তিনি প্রচণ্ড আওয়াজে কথা বলছিলেন। আমাদের উচিত পরস্পরকে সম্মান দেয়া, এটি তার আচরণে অনুপস্থিত।
প্রথম ঘটনা আরও বিশাল, এই ধাক্কার ঘটনায় রাহুল গান্ধির নামে একাধিক মামলা পর্যন্ত দায়ের হয়েছে। এমনকি এই ইস্যুতে দুজন এমপিকে আইসিইউতে নেয়ার পাশাপাশি ভারতীয় রাজনীতির টক অব দ্য টাউন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এটি। এমনি হাস্যরসের কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ‘ধাক্কা’ ঘটনা।
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে ‘পাপ্পু’ কীভাবে ‘শক্তিমান’ হয়ে গেল? রাজনীতির মাঠ আর ফুটবলের মাঠ আলাদা। তবে দুই মাঠে একেবারে বিপরীতধর্মী ভুক্তভোগীর অবস্থানে রাহুল-নেইমার। তাই মিল বা কমন ক্ষেত্র দুজনের একেবারেই নেই।
আরও বড় পার্থক্য হলো, দিনদিন নেইমার তার ক্লাবের ক্ষেত্রে ‘হাতি পোষা’ প্রজেক্টে পরিণত হয়েছে, অপরদিকে রাহুল কংগ্রেস তথা ‘ইনডিয়া’ জোটের ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভুত হয়েছেন। নেইমারের প্রাইম টাইম শেষ, আর রাহুলের হয়ত শুরু- সবশেষ লোকসভা নির্বাচনে সেই ইঙ্গিতই দেখা গিয়েছে।