নামাজ প্রত্যেক মুসলিমের জন্য প্রতিদিনের অবশ্যকরণীয় একটি ইবাদত। ইসলামের দ্বিতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ নামাজ বা সালাত আদায়ের সময় অবশ্যই সতর ঢাকতে হবে। সতর ঢাকা না থাকলে নামাজ হবে না। আবার নামাজের সময় সুন্দর শালীন পোশাক পরার কথাও এসেছে হাদিসে।
অন্যদিকে নামাজ আদায়ের অন্যতম পূর্বশর্ত অজু। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন কোনো মুসলিম অথবা মুমিন বান্দা অজু করে আর সে তার মুখ ধৌত করে, তখন অজুর পানি অথবা অজুর পানির শেষ ফোটার সঙ্গে সঙ্গে তার চেহারা থেকে সব গুনাহ বের হয়ে যায়। যা সে তার দু’চোখ দিয়ে দেখেছিল। আর যখন সে তার দু’হাত ধৌত করে তখন অজুর পানি বা অজুর পানির শেষ ফোটার সঙ্গে সঙ্গে তার উভয় হাত থেকে সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে হাত দিয়ে ধরেছিল, এমনকি শেষ পর্যন্ত সে তার গুনাহ থেকে পাক হয়ে যায়। (তিরমিজী, হাদিস: ২, সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৭০)
এ ক্ষেত্রে গরমকালে প্রায় সবাই পাতলা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরলেও শীতে থাকে ভিন্ন চিত্র। এই সময়ে গরম কাপড়ের সঙ্গে অনেকে মোজাও পরে থাকেন। তবে প্রশ্ন হলো- শীতে মোজা পরে অজু করা বা নামাজ আদায় করা বিশুদ্ধ হবে কিনা?
মুগীর ইবনু শু’বা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন- আমি কোনো এক সফরে রাসুল (সা.) এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি (নবীজি) বললেন, হে মুগীরা! লোটাটি নাও। আমি তা নিলাম। তিনি আমার দৃষ্টির বাইরে গিয়ে প্রয়োজন সারলেন। তখন তাঁর দেহে ছিল শামী জুব্বা। তিনি জুব্বার আস্তিন থেকে হাত বের করতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন সংকীর্ণ হওয়ায় তিনি নিচের দিক দিয়ে হাত বের করলেন। আমি পানি ঢেলে দিলাম এবং তিনি সালাতের অজুর ন্যায় অজু করলেন। আর তাঁর উভয় মোজার ওপর মাসেহ করলেন ও পরে সালাত আদায় করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৫৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫২৪)
ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসেও এ বিষয়ে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলো, ইহরামকারী কি পরিধান করবে? তিনি বললেন, সে জামা পরবে না, পায়জামা পরবে না, টুপি পরবে না, জাফরান বা ওয়ারস রঙে রঞ্জিত কাপড় পরবে না। আর জুতা না পেলে মোজা পরবে। তবে তা পায়ের গিরার নীচে পর্যন্ত কেটে নেবে। নাফি (রহ.) ইবনু উমর (রা.) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৫৯)।
এছাড়া হাম্মাম ইবনু হারিস (রহ.) বলেন, আমি জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) কে দেখলাম যে, তিনি প্রস্রাব করলেন। তারপর অজু করলেন আর উভয় মোজার ওপরে মাসেহ করলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আমি রাসুল (সা.)-কেও এরূপ করতে দেখেছি। ইবরাহীম (রহ.) বলেন, এই হাদিস মুহাদ্দিসীনের কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়। কারণ, জারীর (রা.) ছিলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ যুগের ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৮০)
আবার মুগীর ইবনু শু’বা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে মোজার ওপর মাসেহ করার কথা এসেছে। তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অজু করিয়েছি। তিনি অজুর সময় মোজা দু’টির ওপর মাসেহ করলেন ও সালাত আদায় করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৮১)
উপরোক্ত হাদিসগুলো দ্বারা এটাই প্রমাণ হয় যে, প্রয়োজনে অজুর সময় মোজার ওপর মাসেহ করা যাবে, এমনকি মোজা পরে নামাজও আদায় করা যাবে।