বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর আলোচনায় যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর পুরো ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুরো প্রতিনিধি দলটিকে আইসোলেশনে বা সকলের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে যে, ভারতীয় প্রতিনিধি দলের দু’জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হওয়ার পর দেশটির জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আইসোলেশনে থাকার এই নির্দেশ দিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীয় সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে থাকতে পারেন বলে তাকে জানানো হয়েছে।’
ভারতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং প্রতিদিনই আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়া ও মৃত্যুর সংখ্যা নতুন রেকর্ড তৈরি করছে।
মঙ্গলবার একদিনেই মারা গেছে ৩ হাজার ৭৮০ জন। দেশটিতে করোনায় মোট প্রাণহানি সোয়া দুই লাখ ছাড়িয়েছে। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন তিন লাখ ৮২ হাজার। মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটিরও বেশি।
এরকম পরিস্থিতিতে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর ব্রিটেনে পৌঁছানোর পর গত মঙ্গলবার ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। টুইট করা ছবিতে দেখা যায়, তারা দুজনেই মুখে মাস্ক পরে আছেন এবং তারা দুটো ফাইল বিনিময় করছেন।
ব্রিটেনের জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে বজায় রাখার কারণে এ বৈঠকে যারা যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের আইসোলেশনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। জয়শঙ্কর এখন তার নির্ধারিত সব বৈঠক অনলাইনে করবেন।
জয়শঙ্কার বলেন, ‘সতর্কতা হিসেবে ও অন্যদের কথা বিবেচনা করে আমি আমার সব বৈঠক ভার্চুয়ালি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জি-৭ জোটের সদস্য নয় ভারত, কিন্তু দেশটির প্রতিনিধিদেরকে নিয়মিতই এই সম্মেলনে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর কোনো আলোচনায় শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে ঊর্ধ্বতন এক ব্রিটিশ কূটনীতিক দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘এখন তিনি ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন। কোভিড প্রোটোকল মেনে চলা এবং দৈনিক পরীক্ষার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কারণেই এটা করতে হয়েছে।’
বিশ্বের ৭টি কথিত উন্নত দেশের জোট জি-৭ এর সদস্য হচ্ছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র। এই জোটের নেতাদের আনুষ্ঠানিক সম্মেলন হবে জুন মাসে। কিন্তু তার আগে এখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে।
প্রায় দুই বছর পর এই প্রথম এই জোটের সদস্য দেশের মধ্যে মুখোমুখি পর্যায়ে বৈঠক হচ্ছে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি দলকে আহবান জানানো হয় অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্য।
আলোচনায় যেসব প্রতিনিধি যোগ দিতে এসেছেন তাদের দৈনিক পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানানো হয়েছে। আজ বুধবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী যাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তাদের সঙ্গে হাত মেলানোর পরিবর্তনে কনুই দিয়ে স্পর্শ করার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান।
তার পর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে তারা একটি স্বচ্ছ স্ক্রিনের দুই পাশে বসে বৈঠক করেন। এসব আলোচনায় মহামারি মোকাবিলার উপায় এবং সারা বিশ্বে কোভিড টিকা সরবরাহের ব্যাপারে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।