রাব্বুল আলামীন হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম করেছেন কদরের রাতকে। বরকতময় এই রাতটিকে রমজানের শেষ দশকে লুকায়িত অবস্থায় আছে। শেষ দশকের বেজোড় রাতে এই রাতটিকে তালাশের কথা বলা হয়েছে। তাই মুসলিম সমাজের প্রত্যেকেই এই বরকতময় রাতটি পাবার চেষ্টায় ব্যাকুল থাকেন। তবে কল্যাণময় কদরের রাতটিকে পাবার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হলো ইতিকাফ।
কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন : ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত এই রাতটি পুরোপুরি শান্তিময়।’ (সূরা কদর ৩, ৫)
রমজানের শেষ দশকে নির্বিঘ্নে ইবাদত বন্দেগিতে যাতে মশগুল থাকতে পারেন এবং এর মধ্যেই যাতে কদরকে পেতে পারেন এই উদ্দেশে আল্লাহর মুমিন বান্দারা ইতিকাফে বসেন। শুধু একটিই লক্ষ্য আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ।
কোন স্থানে আটকে পড়া অথবা কোন স্থানে থেমে যাওয়াকে ইতিকাফ বলে। ইসলামী শরীয়াতের ভাষায় ইতিকাফের অর্থ দুনিয়ার সংস্রব, সম্বন্ধ ও বিবি-বাচ্চা থেকে আলাদা হয়ে মসজিদে অবস্থান করা।
ইতিকাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ দুনিয়াবী কারবার ও সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং সাংসারিক কর্মব্যস্ততা ও প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চিন্তা ও কাজের শক্তি এবং যোগ্যতাকে আল্লাহর স্মরণ এবং ইবাদতে লাগিয়ে দেওয়া। সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহর প্রতিবেশি হয়ে পড়া।
ইতিকাফের দ্বারা একদিকে সে ব্যক্তি সব প্রকার বেহুদা কথাবার্তা ও মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পারবে এবং অন্যদিকে আল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্ক মজবুত হবে। তাঁর নৈকট্যলাভ করবে এবং তাঁর ইয়াদ ও ইবাদতের মনে শান্তি লাভ করবে। তাই কদরের রাত তালাশের জন্য ইতিকাফ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা।
ইতিকাফে বসে কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, তাসবীহ পড়া, দরুদ পড়া এবং জিকির-আসকার করে লাইলাতুল কদরের রাতকে পাওয়া অনেকটাই সহজ। আজ ২২ রমজান যাচ্ছে, যারা এখনও ইতিকাফে বসতে পারেননি, তারা নিয়ত করে বসে যেতে পারেন।
হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলে করীম (স.) বলেছেন, যখন এই রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকে, তখন স্বয়ং পরওয়ার দেগার দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং বলতে থাকেন, ওগো! কে আছ, যে (এ সময়) আমাকে ডাকবে! আমি তার ডাকে সাড়া দিব। ওগো! কে আছ, যে আমার কাছে কিছু চাবে, আমি তাকে তা দিয়ে দিব। ওগো! কে আছ, যে এ সময় আমার কাছে গুণাহ হতে ক্ষমা চাবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। (বুখারী, মুসলিম)
ইতিকাফের নিয়তে ২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। ঈদের চাঁদ উদয় না হওয়া পর্যন্ত ইতিকাফের স্থানে অবস্থান করতে হবে।
মেয়েদের নিজের ঘরেই ইতিকাফ করা উচিত। তাদের মসজিদে ইতিকাফ করা মাকরূহ। সাধারণত ঘরে যে স্থানে তারা নামায পড়ে তা পর্দা দিয়ে ঘিরে নেবে এবং ইতিকাফের জন্য তা নির্দিষ্ট করে নেবে।
প্রাকৃতিক প্রয়োজনে, যেমন- পেশাব, পায়খানা, গোসল প্রভৃতি কাজে বের হওয়া যাবে। শরীয়তের প্রয়োজন যেমন জুমার নামাজ প্রভৃতির জন্য বের হওয়া যাবে। কিন্ত প্রয়োজন পূরণের সঙ্গে সঙ্গে ইতিকাফের স্থানে ফিরে যেতে হবে।
সূত্র : সহিহ সিত্তাহ