মিয়ানমারে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সমাধানে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবি দেশটির সামরিক জান্তার প্রতি জানিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সহযোগিতা সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান)। শনিবার ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় সংস্থাটির সম্মেলনে জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অঙ হ্লাইংয়ের বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর নেতারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, পরিস্থিতির উন্নতিতে সকল পক্ষকে আবশ্যিকভাবে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।
এতে আরো বলা হয়, দেশটির জনগণের স্বার্থে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সব পক্ষকে গঠনমূলক সংলাপে বসতে হবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সংলাপে সব পক্ষকে উৎসাহিত ও মধ্যস্থতায় আসিয়ান প্রধানের বিশেষ এক দূত এখানে কাজ করবেন।
আসিয়ানের বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারে মানবিক সহায়তার জন্য সংস্থাটির অন্তর্ভুক্ত আসিয়ান হিউম্যানটেরিয়ান অ্যাসিসটেন্স সেন্টার কাজ করবে।
এছাড়া আসিয়ানের বিশেষ দূত ও প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের সকল পক্ষের সাথে সাক্ষাত এবং আলোচনা করবেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
এর আগে জাকার্তায় অনুষ্ঠিত আসিয়ানের সম্মেলনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর প্রথম বিদেশ সফরে যান জেনারেল হ্লাইং।
আসিয়ানভুক্ত সকল দেশের নেতারা জেনারেল মিন অঙ হ্লাইংয়ের সাথে বৈঠকে বসতে সম্মত হলেও তারা তাকে মিয়ানমারের প্রধান হিসেবে সম্ভাষণ থেকে বিরত থাকেন বলে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারশুদি জানান।
আসিয়ানের পাঁচ দফা দাবিকে স্বাগত জানিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরোধী নতুন গঠিত সমান্তরাল সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গর্ভনমেন্ট (এনইউজি)।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, তারা মিয়ানমারে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পুনরুদ্ধারে আসিয়ানের সিদ্ধান্ত অনুসারে পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছেন।
এদিকে জেনারেল হ্লাইংয়ের জাকার্তার সম্মেলনে যোগদানের পরিপ্রেক্ষিতে জাকার্তায় এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং সামরিক শাসনের বিরোধী স্লোগান দেয়।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের আড়াই মাস পার হলেও দেশজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। শনিবার বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনসহ মিয়ানমারের প্রধান প্রধান সব শহরে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
মিয়ানমারের অবস্থা পর্যব্ক্ষেণকারী থাইল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) তাদের দৈনিক প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানায়, ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে বিক্ষোভে সামরিক জান্তার দমন অভিযানে অন্তত সাত শ’ ৪৫ জন নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিক্ষোভ সংশ্লিষ্টতায় সামরিক জান্তার হাতে বন্দী রয়েছে তিন হাজার তিন শ’ ৭১ জন। এছাড়া গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে আরো এক হাজার এক শ’ ১৮ জনের নামে।
১ ফেব্রুয়ারি তাতমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।
সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।
সূত্র : আলজাজিরা