স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে গত দেড় মাসে করোনার সংক্রমণ ১০ গুণ বেড়েছে। এই দেড় মাসে এক লাখ ৬০ হাজার জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যা এর আগের দেড় মাসে ছিল মাত্র ১৫ হাজার। আক্রান্তদের অধিকাংশই আইসিইউর জন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন। আমরা আপনাদের আইসিইউতে দেখতে চাই না।
রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল উদ্বোধনের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আইসিইউ নিয়ে শুরুতে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা ছিল। সবাই বলেছিল আমাদের আইসিইউর সংখ্যা কম। ঢাকায় দুইশ থেকে আড়াইশ আইসিইউ রয়েছে। সব মিলিয়ে সারাদেশে পাঁচশর বেশি আইসিইউ হবে। এখন আমাদের আইসিইউ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিএনসিসির করোনা হাসপাতালে ২১২টি আইসিইউ যুক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে রাজধানীতে যতো সংখ্যক আইসিইউ, তার সমপরিমাণ আইসিইউ এই হাসপাতালে তৈরি হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা শহরে সরকারি হাসপাতলে পাঁচ হাজার শয্যা রয়েছে। শুরুতে প্রাইভেট হসপিটাল করোনা চিকিৎসায় এগিয়ে না এলেও পরে এক হাজার শয্যা নিয়ে তারা কাজ শুরু করে, যা দুই হাজার শয্যায় পরিণত হয়। ফলে দেশে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে আট হাজার শয্যায় পরিণত হয়।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এক শয্যায় দুইজনকে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। বিভিন্ন উন্নত দেশে তাঁবুতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। কিন্তু এখনও আমরা রোগীদের হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি- যোগ করেন মন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, শুরুতে আমাদের হাসপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছিল না। এখন আমরা ১০০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন দিয়েছি। আরও ৩০টি সেন্ট্রাল অক্সিজেনের কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালকেই সেন্ট্রাল অক্সিজেনের আওতায় আনা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা দেখছি যে ১৫ থেকে ২০ বছরের তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তবে তাদের মৃত্যু কম হচ্ছে। কিন্তু তারা বাসায় এসে মা-বাবাসহ বয়স্কদের সংক্রমিত করছে। তরুণদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনারা বাইরে যাবেন, তবে মাস্ক ব্যবহার করবেন। নিজে ভালো থাকবেন, অন্যদের ভালো রাখবেন। আমরা প্রিয়জনদের মৃত্যুর কারণ যেন না হই।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রােগে আক্রান্ত প্রথম রােগী শনাক্তের পর পর্যায়ক্রমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এর বিস্তার ঘটে। এর প্রেক্ষাপটে ডিএনসিসি মার্কেটটি কোভিড-১৯ রােগীদের সেবা দেওয়ার জন্য কিছুটা সংস্কার ও পরিবর্ধন করে এটিকে এক হাজার শয্যার করােনা আইসােলেশন সেন্টার হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। পরে গত বছরের ১৩ জুলাই এটির কার্যক্রম চালুর শুরুতে সরকারের বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে করােনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। এ অবস্থায় কোভিড আইসােলেশন কার্যক্রমটি স্থগিত করে এটিকে বিদেশগামী যাত্রীদের আরটি-পিসিআর স্যাম্পল কালেকশন সেন্টার হিসেবে কার্যক্রম শুরু করা হয়, যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
কিন্তু গত ২০-২৫ দিন ধরে কোভিড রােগে আক্রান্তের সংখ্যার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রােগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে করােনায় আক্রান্ত সব রােগীর সুচিকিৎসার জন্য ডিএনসিসি করােনা আইসােলেশন সেন্টারটিকে প্রয়ােজনীয় সংস্কার ও পরিবর্ধন করে এটিকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে। এটি এখন থেকে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত হবে, বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই হাসপাতালটিতে ২১২ শয্যার অত্যাধুনিক কোভিড আইসিইউ বেড রয়েছে। ২৫০ কোভিড বেড (HDU, Central Oxygen ও High Flow Nasal Canulla) ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা থাকছে। এখানে ৫০ শয্যার জরুরি বিভাগ ও ৬ শয্যা ট্রায়াজ বেড রয়েছে। তাছাড়া ৫৩৮ কোভিড আইসােলেটেড কক্ষ থাকবে সেখানেও সিলিন্ডার অক্সিজেন ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর থাকবে।
হাসপাতালটিতে সর্বমােট এক হাজার শয্যার কোভিড রােগীর জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালটিতে আধুনিক অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাছাড়া ৫০০ কেভিএ জেনারেটর ও ১০০০ কেভিএ হাই ভােল্টেজ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপনের জন্য ৯০ হাজার লিটার ওয়াটার রিজার্ভার থাকছে।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, আজ (১৮ এপ্রিল) থেকে কোভিড রােগীদের বিশেষায়িত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য এটি চালু করা হলাে। এটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে থেকে পরিচালিত হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এই হাসপাতালটির জনবল, যন্ত্রপাতি, ওষুধপত্রসহ দৈনন্দিন নির্বাহের সামগ্রিক ব্যয়ভার বহন করবে। সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা রােগী সেবা কার্যক্রমে নিয়ােজিত থাকবেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এই বিশাল ভবনটি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রােগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করার ব্যবস্থা করেছেন, যা এই সংকটময় পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, আইসােলেশন সেন্টারটি কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বশির আহমেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে এত অল্প সময়ে এই বিশাল কার্যক্রম সম্পন্ন করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলমসহ আরও অনেকে।