যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির তাকোমা এলাকায় এক এশীয় দম্পতির ওপর হামলা চালানো ও নিগ্রহের অভিযোগে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ। দেশটির স্থানীয় সময় শনিবার ঘটে এই ঘটনা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে হামলার সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, একটি সড়কের ধারে আরো অনেকের সঙ্গে এক এশীয় নারী ও পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন, এমন সময় রেড হুডি পরিহিত এক কিশোর তাদের দিকে তেড়ে এসে ওই পুরুষটিকে লক্ষ্য করে ঘুষি চালাতে থাকে।
ভিডিও চিত্রে তারপর দেখা যায়, হামলার প্রথম পর্যায়ে হতভম্ব হয়ে পড়া ওই এশীয় ব্যক্তি খুব দ্রুত সামলে উঠে নিজেকে রক্ষা করতে হামলাকারীকে লাথি দিয়ে সরিয়ে দিতে চান, কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। হামলাকারী কিশোর ওই ব্যক্তিকে একের পর এক ঘুষি মেরে যেতে থাকে। এ সময় হামলার শিকার ওই ব্যক্তির স্ত্রী স্বামীকে সরিয়ে আনতে তার বাহু ধরে টানছিলেন।
মাত্র কয়েকমিনিট আঘাতের পর দৌড়ে সেই স্থান ত্যাগ করে হামলাকারী কিশোর। ওই ব্যক্তিও পরে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
তাকোমা পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা ওয়েন্ডি হ্যাডৌ ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘হামলায় একাধিক কিশোরের সংশ্লিষ্টতা ছিল, সবারই বয়স ১৩ থেকে ১৭র মধ্যে। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি অ্যসল্টের অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কী কারণে এই হামলা করা হলো তা এখনো স্পষ্ট নয়।’
‘আমরা ধারণা করছি, এটা এশীয়দের প্রতি ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ(হেইট ক্রাইম)। গ্রেফতার হামলাকারীর অন্যান্য সঙ্গীদের আটকের চেষ্টা চলছে। তাদের আটক করলেই হামলার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
এদিকে এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল কিরো টিভিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন হামলার শিকার ওই ৫৬ বছর বয়সী ব্যক্তি। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি একজন এশিয়ান, বয়স্ক এবং দেখতে লম্বা-চওড়া নই। এ কারণেই ওরা আমাকে হামলা করেছে।’
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পুলিশ স্টেশনে আমি জানিয়েছি, মোট চারজন কিশোর এই হামলায় সংশ্লিষ্ট ছিল। সড়কের যে জায়গায় আমি আর আমার স্ত্রী দাঁড়িয়েছিলাম, তার কাছেই আড্ডা দিচ্ছিল তারা।’
‘আমরা সেখানে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই ছোটাছুটি শুরু করল তারা। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এটা তাদের বয়সজনিত চাঞ্চল্য। তারপর হঠাৎ তাদের মধ্যে একজন আমার কাছে এসে মুখের ডানপাশে ঘুষি চালাতে শুরু করল এবং আমি বুঝতে পারলাম, আমার মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে।’
হামলাকারী ওই কিশোর স্থান ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যক্তি।
২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়দের ওপর হামলার পরিমাণ প্রতিদিনই বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের নিরাপত্তা রক্ষায় সক্রিয় সংস্থা স্টপ এএপিআই (এশিয়ান আমেরিকান অ্যান্ড প্যাসিফিক আইল্যান্ডার) হেইটের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে , ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুরো যুক্তরাষ্ট্রে এশীয় ও এশীয় বংশোদ্ভুতদের ওপর তিন হাজারেরও বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
তবে ওয়াশিংটন পোস্টকে স্টপ এএপিআই হেইটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমিত লোকবলের কারণে তারা এ বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান করতে পারেনি। প্রকৃত হামলার সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
শনিবার হামলার শিকার ও এশীয় ব্যক্তি অবশ্য হামলারকারীর ওপর ক্ষোভ পুষে রাখেননি। আটক ওই কিশোরকে ক্ষমাও করে দিয়েছেন তিনি।
কিরো টিভিকে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে দেখা করতে চাই। তাকে বলতে চাই, মানুষের বিরুদ্ধে হিংসা পোষণ করা খুব খারাপ, অমানবিক একটি ব্যাপার। একজন প্রকৃত মানুষ হতে হলে অবশ্যই আমদের অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।’
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট