ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে তাইগ্রে গণহত্যা

অবশ্যই পরুন

পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার তাইগ্রে অঞ্চলে সেনাবাহিনী, আধা-সামরিক বাহিনী এবং বিদ্রোহীরা অন্তত ১৫০টি গণহত্যা সংঘটিত করেছে। এসব ঘটনায় ওই অঞ্চলের প্রায় ২ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয় বলে তাইগ্রে সংঘাত নিয়ে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। যারা এই গণহত্যার শিকার হয়েছেন; তাদের ৯০ শতাংশের পরিচয় শনাক্ত করেছেন গবেষকরা।

বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব ঘেন্টের একদল গবেষক ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলের তাইগ্রে সংঘাত নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা বলছেন, ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনী, আধা-সামরিক বাহিনী এবং বিদ্রোহীরা তাইগ্রের শিশু থেকে শুরু করে ৯০ ঊর্ধ্ব বৃদ্ধদেরও হত্যা করেছে।

গত বছর তাইগ্রে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা শুরু করে ইউনিভার্সিটি অব ঘেন্টের গবেষক দল। তারা গণহত্যার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য, স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, গণমাধ্যম এবং অন্যান্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, যুদ্ধের সময় বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যার সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড এটি। এর ফলে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাবে। ইথিওপিয়ার এই প্রধানমন্ত্রী তাইগ্রে অঞ্চলে নৃশংসতার অনেক তথ্য অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন।

গত বছরের নভেম্বরে তাইগ্রেতে ইথিওপিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটিতে আকস্মিক হামলা হয়। হামলার পর দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় এই প্রদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টকে (টিপিএলএফ) ক্ষমতাচ্যুত করে সেখানে আইনের শাসন ফেরাতে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন আবি আহমেদ।

প্রাদেশিক রাজধানী মেকেলে থেকে টিপিএলএফের নেতাদের উৎখাতের পর অভিযান সফল হয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাইগ্রেতে আদ্দিস আবাবার অনুগত অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন নিয়োগ দেন আবি আহমেদ। তখন থেকে এই অঞ্চলে বেসামরিকদের লক্ষ্য করে সহিংসতা এবং গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। যদিও ইথিওপিয়ার সামরিক বাহিনী এবং তাদের মিত্ররা তাইগ্রেতে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে বলে দাবি করেছে।

ইউনিভার্সিটি অব ঘেন্টের গবেষকরা তাইগ্রেতে গত মাসেও অন্তত ২০টি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছে। এর প্রত্যেকটি ঘটনায় কমপক্ষে পাঁচজনকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়। অর্থনৈতিক ও কৌশলগত দিকে থেকে গুরুত্বপূর্ণ তাইগ্রের পশ্চিমের হুমেরা শহরে মাত্র তিনদিনে আড়াইশ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে ইথিওপিয়ার সেনা, আধা-সামরিক বাহিনী এবং বিদ্রোহীরা। এই শহরটিতে স্থানীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর জাতিগত নিধন অভিযান চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

মার্চের শেষ সপ্তাহে প্রাদেশিক রাজধানী মেকেলে থেকে ৫০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত গ্রিজানার একটি গ্রামে সন্দেহভাজন টিপিএলএফ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সৈন্যরা। এই অভিযানে অন্তত ১৩ জনকে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনের বয়স ৫০ এর কোটায়। এছাড়া বেশ কয়েকজন নারী, ১৫ বছরের এক কিশোর এবং দুই বছরের এক শিশুকেও হত্যা করেন সৈন্যরা।

ভূগোলবিদ অধ্যাপক জ্যান নিসেন ওই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাইগ্রেতে কয়েক দশক ধরে বসবাস এবং কাজ করে আসছেন তিনি। জ্যান নিসেন বলেন, গবেষণাটি একটি যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নের মতো।

তিনি বলেন, ‘এসব মানুষকে ভুলে যাওয়া উচিত নয় এবং এই যুদ্ধাপরাধের তদন্ত হওয়া উচিত… তাইগ্রেতে যা ঘটছে তার একটি মাত্রা দেখিয়েছে এই তালিকা। আমরা জানি সেখানে আরও অনেক বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটছে। কিন্তু… আমরা এই এক হাজার ৯০০ জনের নাম এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে জানি।’

গবেষকরা তাইগ্রেতে গণহত্যার শিকার ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে বলেছেন, দুই হাজারের বেশি মানুষের টেলিফোন কল এবং শতাধিক মানুষের সরাসরি স্বাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অন্যান্য উৎস থেকে সাত হাজারের বেশি মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন তারা। বৃহস্পতিবার এই গবেষণার পূর্ণাঙ্গ তথ্য এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের নাম টুইটারে প্রকাশ করা হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব ঘেন্টের গবেষকরা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার শনাক্ত মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ বিমান হামলা অথবা কামানের গোলায় প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাসা-বাড়িতে তল্লাশি অভিযানের সময় গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন আকসুম অঞ্চলের প্রায় ৮০০ এবং মাই কাদরার ৬০০ মানুষ।

গবেষকরা বলেছেন, নিহতদের ৯০ শতাংশের বেশিকে পুরুষ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনী ১৪ শতাংশ এবং ফেডারেল বাহিনী ও প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সামরিক বাহিনী ৪৫ শতাংশ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

এছাড়া পার্শ্ববর্তী আমহারা প্রদেশের অনিয়মিত আধা-সামরিকবাহিনী পাঁচ শতাংশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অন্যদিকে, প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি— ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়ার সৈন্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে ১৮ শতাংশ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ

রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তনেও সঙ্গে থাকার বার্তা জাপানের

রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে জাপান কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। রোববার (২৪...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ