ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলবদল করে বিজেপিতে যোগ দেওয়া তারই সাবেক সহযোগী শুভেন্দু অধিকারীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ। এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থী লড়ছেন বিধানসভার নন্দীগ্রাম আসনে।
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মোট ৩০টি আসনে। তবে সব আসনকে ছাপিয়ে এ পর্বে সবার নজর হাই-ভোল্টেজ আসন পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির পালাবদলের আঁতুরঘর এ নন্দীগ্রামে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ও তারই একসময়ের বিশ্বস্ত ’সেনাপতি’ তথা বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এই নন্দীগ্রামেই শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পথ করে নিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি- এখন থেকে ১৪ বছর আগে। এবার তিনি নিজেই লড়ছেন নন্দীগ্রামের বিধানসভা আসনে।
এদিকে ভোটের আগের দিন অর্থাৎ বুধবার নন্দীগ্রামে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সেখানে এক হাজারেরও বেশি কেন্দ্রীয় পুলিশের সদস্য আনা হয়েছে। আকাশপথে নজরদারির বন্দোবস্ত করা হয়েছে। শুধু ওই আসনের জন্য থাকছেন এক পর্যবেক্ষক। অতিরিক্ত ডিজি পশ্চিমাঞ্চলেরর নেতৃত্বে পাঠানো হচ্ছে অতিরিক্ত দুজন আইপিএস অফিসারকে।
বুধবার পুর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুমিতা পান্ডে জানিয়েছেন, নির্বাচনে অনিয়ম সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। নিরাপত্তার কোনো কমতি নেই। তার মতে, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো বুথ এলাকাতেই ১৪৪ ধারা জারি থাকে। কিন্তু নন্দীগ্রামের ক্ষেত্রে শুধু এটুকুই নয়, গোটা বিধানসভা এলাকাতেই ১৪৪ ধারা বজায় থাকবে।
জেলাশাসক বলেন, ‘এবার নন্দীগ্রামে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে, যা বুধবার ও বৃহস্পতিবার বলবৎ থাকবে। পাশাপাশি অতি সংবেদনশীল বুথগুলোতে ৪ ধরনের নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি বুথে থাকবে লাইভ ওয়েবকাস্টিং, সিসিটিভি, ভিডিওগ্রাফি এবং পর্যবেক্ষক। এ ছাড়াও নন্দীগ্রামের ৫০ শতাংশ বুথে লাইভ ক্যামেরায় নজরদারি চলবে, যা তদারক করা হবে তমলুকের নিমতৌড়িতে জেলাশাসকের কার্যালয় থেকে।’
চার জেলায় ভোট রয়েছে সার্বিকভাবে সেগুলোর নিরাপত্তায় নির্বাচন কমিশন যে পদক্ষেপ নিয়েছে…
পূর্ব মেদিনীপুর
দ্বিতীয় দফায় পূর্ব মেদিনীপুরে ৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এই জেলার ১০০ শতাংশ বুথকেই স্পর্শকাতর হিসেবে ঘোষণা করেছে কমিশন। নন্দীগ্রামসহ পূর্ব মেদিনীপুরের সব আসনে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। সব পোলিং স্টেশনেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এই জেলায় মোট ১৯৯ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রত্যেক আসনের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বুথে থাকছে ওয়েব কাস্টিংয়ের ব্যবস্থা। কোনো অভিযোগ পেলেই পৌঁছে যাবে কুইক রেসপন্স টিম।
পশ্চিম মেদিনীপুর
পূর্ব মেদিনীপুরের মতোই এই দফায় পশ্চিম মেদিনীপুরেও ৯ আসনে হচ্ছে ভোটগ্রহণ। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে ২০১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ৬ হাজার রাজ্য পুলিশ। প্রতিটি বুথে মোতায়েন থাকছে চারজন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান এবং একজন লাঠিধারী পুলিশ। প্রতিটি বিধানসভা আসনে ২০ থেকে ২৫টি কুইক রেসপন্স টিম দায়িত্বপালন করছে। এই দফায় জেলায় সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর বুথ কেশপুরে। সংখ্যাটা ১৭৬, যা মোট বুথের প্রায় ৪৯ শতাংশ।
বাঁকুড়া
দ্বিতীয় দফায় বাঁকুড়া জেলার ৮টি আসনে হচ্ছে ভোটগ্রহণ। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে ১৬১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। সঙ্গে থাকছেন ৫ হাজার ৫২২ জন রাজ্য পুলিশের সদস্য। পাশাপাশি থাকছেন ৪৩৭ জন মাইক্রো অবজারভার। এছাড়াও ১ হাজার ৪০০টি ওয়েব কাস্টিং এবং ২৭০টি ভিডিওগ্রাফির ব্যবস্থা রয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মোট ৪টি বিধানসভায় হচ্ছে ভোটগ্রহণ। ভোটের নিরাপত্তায় মোতায়েন ৭২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাছাড়াও অশান্তি এড়াতে থাকছে অন্যান্য ব্যবস্থা।
রাজ্যটির দ্বিতীয় দফায় ৪ জেলার ৩০ আসনে ভাগ্য নির্ধারণ হবে মোট ১৭১ প্রার্থীর।