বসনিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত উনা সানা ক্যান্টনে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৩৩ জন শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি তাদের সংস্পর্শে থাকা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও সিকিউরিটি এজেন্সির ১২ কর্মকর্তার শরীরেও ভাইরাসটির অস্তিত্ব শনাক্ত হয়েছে।
উনা সানার স্থানীয় ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক মন্ত্রী মেরমিনা সেমালোভিচের বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে তাদের সবাইকে উনা সানার প্রশাসনিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত বিহাচের বোরিচি সেন্টারে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
উনা সানার পাশাপাশি বসনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ভেলিকা ক্লাদুসার মিরাল সেন্টারেও পাঁচ অভিবাসনপ্রত্যাশীর শরীরে মিলেছে করোনার উপস্থিতি। তাদেরও আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
ইউরোপ মহাদেশে সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোর মাঝে বসনিয়া একটি। পাশাপাশি যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। প্রতি বছর বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা থেকে অসংখ্য মানুষ অভিবাসনের আশায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, স্লোভেনিয়া, ইতালিসহ উন্নত দেশগুলোতে পাড়ি জমান।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন এনজিও ও মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা প্রায়ই বসনিয়ার শরণার্থী শিবিরের পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এমনকি গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ব্যবস্থাপনা সংকটের জের ধরে লিপায় অবস্থিত শরণার্থী শিবিরটিকে চূড়ান্তভাবে বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন আইওএম বসনিয়ার চিফ অব মিশন পিটার ভ্যান ডার আওউইরায়ের্ট।
লিপার শরণার্থী শিবিরে এখন পর্যন্ত কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি-না সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য জানায়নি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। তবে ক্যাথলিক চ্যারিটেবল সংস্থা কারিতাস জানিয়েছে, লিপার শরণার্থী শিবিরে দুইজন ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন।
কারিতাসের মুখপাত্র ড্যানিয়েলে বোম্বার্ডি এক জুম মিটিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রায় দুইদিন ধরে আমরা লিপার শরণার্থী শিবিরকে সম্পূর্ণভাবে আইসোলেশনে রেখেছি। তবে কোভিড-১৯ মারাত্মকভাবে সংক্রামক একটি রোগ। অন্যগুলোর তুলনায় লিপার শরণার্থী শিবিরের অবস্থাও একেবারে নাজুক। এখানে প্ৰয়োজনীয় খাদ্য ও খাবার পানি থেকে শুরু করে পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা অত্যন্ত অপ্রতুল। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা কতটুকু সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারব সে বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন আছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অংশ হিসেবে বর্তমানে বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা একটি জনপ্ৰিয় ট্রানজিট রুট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিবাসনপ্রত্যাশী বসনিয়ার সীমানা পাড়ি দিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশ ক্রোয়েশিয়াতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। অনেকে এ যাত্রায় সফলকাম হলেও ক্রোয়েশিয়ার পুলিশ প্রতিনিয়ত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে শত শত অনিয়মিত অভিবাসীকে আটক করেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে ক্রোয়েশিয়ার পুলিশ বাহিনী কর্তৃক শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের কথা বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে।
এমনকি মানবাধিকার সংস্থাগুলোও দাবি করেছে, ক্রোয়েশিয়া এসব শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীকে কোনো ধরনের অ্যাসাইলাম আবেদনের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি বসনিয়াতে পুশব্যাক করছে। ক্রোয়েশিয়া অবশ্য এখনও অভিযোগগুলো স্বীকার করেনি।