অভ্যুত্থানবিরোধীদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সহিংস অভিযানের প্রতিবাদে থাই সীমান্তের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়েছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী কারেন। এতে দেশটির সেনাবাহিনীর ১০ সদস্যের প্রাণহানির পর কারেন বিদ্রোহীদের একটি গ্রামে বিমান হামলা চালিয়েছে সামরিক বাহিনী।
গত মাসের অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধের তীব্র আশঙ্কার মাঝে সেনাবাহিনীর সহিংসতায় জাতিগত বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলো নিশ্চল থাকবে না বলে জানানোর পরদিন থাই সীমান্তে নিরাপত্তা চৌকি আক্রান্ত হয়েছে।
জাতিগত সশস্ত্র কারেন সংখ্যালঘুদের সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) বর্তমানে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ করছে। এই গোষ্ঠীটি বলেছে, কারেন ব্রিগেড-৫ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন পাপুন জেলার ডে পু নো এলাকায় যুদ্ধবিমান থেকে হামলা চালিয়েছে সামরিক বাহিনী। শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকের এই হামলায় সেখানকার গ্রামবাসীরা জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন।
কারেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের গ্রুপ কারেন পিস সাপোর্ট নেটওয়ার্কের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সেনাবাহিনী ওই এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে… আক্রান্ত গ্রামের বাসিন্দারা বলেছেন, এতে দু’জন নিহত ও আরও দু’জন আহত হয়েছেন। প্রত্যন্ত এই অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল। সেখানে হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
তবে এই হামলার বিষয়ে মন্তব্য জানতে টেলিফোন করলে জান্তা সরকারের মুখপাত্র সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। গত কয়েক বছরের মধ্যে ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনীর নতুন এই হামলাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলা হচ্ছে। ২০১৫ সালে দেশটির সরকারের সঙ্গে কেএনইউ অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করার পর এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর আগে, শনিবার কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন জানায়, ব্রিগেড ৫ বাহিনী সরকারি সৈন্যদের একটি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এই হামলায় একজন লেফটেন্যান্ট-কর্নেলসহ ১০ সৈন্য নিহত হয়েছে। রাজধানী নেইপিদোতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপনের সময় থাই সীমান্তে ওই হামলা হয়।
কেএনইউ বলছে, মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক জান্তার সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা শত শত মানুষকে কারেন অধ্যুষিত সীমান্তের গ্রামগুলোতে আশ্রয় দিয়েছে তারা।
শনিবার দেশজুড়ে অভ্যুত্থানবিরোধীদের ওপর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১১৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা এটি।
বার্মিজ গণমাধ্যম মিয়ানমার নাউ বলছে, শনিবার নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দেশজুড়ে ১১৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ বছরের এক মেয়ে শিশুসহ কেবল মান্দালয় শহরেই নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪০ জন। দেশের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৭ জন।
অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর দেশটির সামরিক বাহিনীর নৃশংস অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বের ১২টি দেশের প্রতিরক্ষা প্রধান। রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনীর সহিংস অভিযানের নিন্দা এবং অবিলম্বে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সূত্র: রয়টার্স।