spot_img

শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ মোদির

অবশ্যই পরুন

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০২২ সালে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

শ‌নিবার (২৭ মার্চ) বিকেলে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শে‌ষে সংবাদ স‌ম্মেল‌নে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মো‌মেন।

বৈঠকে বাংলা‌দেশ ও ভার‌তের ম‌ধ্যে ৫টি সমঝোতা স্মারক সই হ‌য়ে‌ছে। সমঝোতাগুলো হলো- দুর্যোগ দমনে সহযোগিতা, ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশে অশুল্ক বাধা দূরের পদক্ষেপ, দুই দেশের জাতীয় ক্যাডেট কোরের মধ্যে সহযোগিতা বিনিময়, তথ্য যোগাযোগ ও রাজশাহীতে খেলার মাঠ বিষয়ে দুই প্রকল্প বাস্তবায়ন।

মো‌মেন ব‌লেন, ‘মানবসম্পদ ও ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, সন্ত্রাসবাদ অবসান ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর প্রগতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্জিত অভূতপূর্ব সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব যৌথভাবে উদযাপনের বিভিন্ন পরিকল্পনাও তাদের আলোচনায় স্থান পায়। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ২০২২ সালে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত স্বাধীন বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর। এজন্য ৬ ডিসেম্বরকে
‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যৌথ উদযাপনের ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলমান রয়েছে। ঐতিহাসিক মুজিবনগর-নদীয়া সড়কটিকে ‘স্বাধীনতা সড়ক’ নামকরণে বাংলাদেশের প্রস্তাবকে ভারত স্বাগত জানিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যস্ততা ও সময়-স্বল্পতার কারণে এখনই সড়কটি উদ্বোধন করা না গেলেও, ভারতীয় পক্ষের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্নের পর যৌথ উদযাপনের অংশ হিসেবে শিগগিরই এটি উদ্বোধন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক ভারসাম্য বাংলাদেশের অনুকূলে আনা এবং বাণিজ্য অবারিত করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বাণিজ্য সহজীকরণ ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। উভয়পক্ষ শুল্ক ও অশুল্ক বাধা অপসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্য রপ্তানির ওপর ২০১৭ সাল থেকে ভারত কর্তৃক আরোপিত অ্যান্টিডামপিং ব্যবস্থা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার ওপরও দুই প্রধানমন্ত্রী জোর দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার মধ্যে নিবিড় সহযোগিতার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে বর্ধিত হারে ভারতীয় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আঞ্চলিক কানেকটিভিটির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন দুই নেতা। সড়ক, রেল ও নৌপথে মাল্টিমোডাল কানেকটিভিটির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড হাইওয়ে প্রকল্পে যুক্ত হতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা ভারতকে জানানো হয়েছে। বিবিআইএন (নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও ভারত) মটোর ভেহিকেল চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে ‘ত্রিদেশীয় সমঝোতা’ দ্রুত স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তার ওপর দুই নেতা বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া ‘চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলরুট’ ব্যবহার করে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল কানেকটিভিটি স্থাপনের বিষয়ে আমাদের আগ্রহের কথাও ভারতকে জানানো হয়েছে। ফেনী নদীর ওপর সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া ‘মৈত্রী সেতু’র কথা উল্লেখ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে পরিবহন সংযোগ স্থাপনের বিষয়ে বাংলাদেশের উদার সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। দুই প্রধানমন্ত্রী ‘নিউ জলপাইগুঁড়ি-ঢাকা রুটে’ যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। মহামারি পরিস্থিতির উন্নয়ন সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব বিমান, বাস ও ট্রেনযোগে এবং স্থলবন্দরগুলোর মধ্য দিয়ে ভ্রমণ সুবিধা উন্মুক্ত করে দেওয়ার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করে যাবে দুই দেশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের দুই মিলিয়ন ডোজ উপহারের জন্য এবং পাঁচ মিলিয়ন ডোজের প্রথম ব্যাচের দ্রুত ডেলিভারির জন্য বাংলাদেশ বন্ধুরাষ্ট্র ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ক্রয় করা অবশিষ্ট ভ্যাকসিন নিয়মিত সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, যৌথ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার ওপর বাংলাদেশের অলঙ্ঘনীয় অধিকারের বিষয়টি বরাবরের মতোই জোরালোভাবে উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তিস্তার পানিবণ্টনের অন্তর্বর্তী চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের জোর দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি জানান, চুক্তিটি দ্রুত স্বাক্ষরে ভারত আন্তরিকভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং এ বিষয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার-এই ছয়টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের অন্তর্বর্তী চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্ত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে দুই দেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মোমেন বলেন, ‘সুরমা-কুশিয়ারা সেচ প্রকল্পে’ কুশিয়ারা নদীর পানি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে রহিমপুর খালের অবশিষ্টাংশ খননের আবশ্যকতার ওপর গুরুত্বারোপ করে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহারের জন্য প্রস্তাবিত সমঝোতা সইয়ে ভারতের দ্রুত সম্মতি কামনা করেছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতা, বিশেষত নেপাল ও ভুটানকে সঙ্গে নিয়ে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ

সশস্ত্রবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বাড়লো আরও ৬০ দিন

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস (৬০...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ