ইস্টারের সময় পাঁচ দিনের কড়া লকডাউনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলেও আস্থা ভোটের দাবি মানতে নারাজ জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল। তবে বেড়ে চলা করোনা সংক্রমণের কারণে জার্মানিতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
ইস্টারের ছুটির সময়ে পাঁচ দিনের কড়া লকডাউনের মাধ্যমে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের গতি কমাতে চেয়েছিলেন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তকে ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে মাত্র দুই দিনের মধ্যে নতি স্বীকার করলেন ম্যার্কেল। এত দ্রুত এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর করা কঠিন বলে মেনে নিলেন তিনি।
বুধবার আবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে জার্মান চ্যান্সেলর কড়া লকডাউনের সিদ্ধান্তকে ভুল হিসেবে তুলে ধরে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলেন। সেইসঙ্গে সিদ্ধান্তের দায় একা নিজের কাঁধে নিয়ে নিলেন।
এমন সাহসি অবস্থানের জন্য অনেক মহলে বাহবা কুড়ালেও বিরোধী পক্ষের তিন দল সংসদে সরকারের বিরুদ্ধে আস্থা ভোটের দাবি জানিয়েছে। করোনা সংকট সামলানোয় ব্যর্থতার দায়ে ম্যার্কেল আদৌ যথেষ্ট সংখ্যক সংসদ সদস্যের সমর্থন পাচ্ছেন কিনা। সেই প্রশ্নের ভিত্তিতে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে বিরোধীরা।
ম্যার্কেল অবশ্য সেই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন। তার প্রতি ফেডারেল সরকার ও সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থন আছে বলে দাবি করেন ম্যার্কেল। উল্লেখ্য, তার নিজের দলের মধ্যে এমন দ্রুত সিদ্ধান্ত বদলের ফলে চরম অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে।
বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী ম্যার্কেলের ইউনিয়ন শিবির ও সার্বিকভাবে জোট সরকারের প্রতি জার্মানির মানুষের সমর্থন কমে চলেছে। সাধারণ নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে সরকারের শরিক দলগুলোর কাজে মোটেই সন্তুষ্ট নয় বেশিরভাগ ভোটার। মূলত করোনা সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগ সেই ধারণাকে আরও জোরালো করে তুলেছে।
অস্পষ্ট ও পরস্পরবিরোধী পদক্ষেপ, টিকাদান কর্মসূচির ধীর গতি, দুর্নীতি কেলেঙ্কারিসহ একাধিক কারণে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বেড়ে চলেছে। আগামী নির্বাচনের পর ম্যার্কেল নিজে চ্যান্সেলর হিসেবে অবসরের ঘোষণা করলেও বর্তমান সংকট সামলাতে ব্যর্থতার দায় থেকে অব্যহতি পাচ্ছেন না।
পাঁচ দিনের কড়া লকডাউনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কারণে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বেড়ে চলা সংক্রমণের কারণে ডাক্তার, হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য অবকাঠামোর উপর বাড়তি চাপ নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে যাচ্ছে। প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে দৈনিক সংক্রমণের গড় সাপ্তাহিক হার বৃহস্পতিবার ১১৩ ছুঁয়েছে।
অদূর ভবিষ্যতে সেই হার আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কড়া লকডাউনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলেও ম্যার্কেল ইস্টারে লকডাউনের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আন্তরিক প্রচেষ্টার উল্লেখ করেন। তবে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সাফল্য ও ব্যর্থতার খতিয়ানের উল্লেখ করে শেষ পর্যন্ত এই সংকট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ম্যার্কেল।
সূত্র: এসিবি, রয়টার্স