spot_img

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শহর নিয়ে আতঙ্কিত যুক্তরাষ্ট্র

অবশ্যই পরুন

যুক্তরাষ্ট্র ও সউদী আরবের সাথে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইরান তাদের ‘ক্ষেপণাস্ত্র শহর’ সারা বিশ্বের সামনে উন্মোচন করেছে। ওই শহরের অবস্থান স্পষ্ট না করলেও সেখানে হাজারো শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র মজুতের বিষয়টি এখন সবার জানা। ইরানের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির নতুন সংঘাতের আশঙ্কা সৃষ্টি করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি ইরানের ওই ক্ষেপণাস্ত্র শহরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড করপোরেশনের (আইআরসিজি) ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ভিডিওতে ক্ষেপণাস্ত্র শহরে ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সমারোহ দেখা যায়। ইরানের সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের এই স্থাপনা ইলেকট্রনিক যুদ্ধের বিরুদ্ধে তাদের সুরক্ষা দেবে। মার্চের শুরুতেই ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়। ইরানের মদদপুষ্ট মিলিশিয়া গ্রুপ দাবি করে, তারা ওয়াশিংটনসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরক্ষা কোষ সক্রিয় করেছে। মিডল ইস্ট মিডিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী ইরানের প্রতিরক্ষা সেল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও সক্রিয় হয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস তাদের নতুন নৌ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করে। উপসাগরে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস এবং ওই অঞ্চলে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকবার উত্তেজনা দেখা দেয়। সামরিক উত্তেজনার জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে দেশ দুটি। গত বছরের জানুয়ারিতে ইরাকের বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হন ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি। এর জবাবে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। সেই থেকে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনার পারদ বেড়েই চলেছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ইরানের বিশেষ বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ডসের উপসাগরীয় অঞ্চলে ভূগর্ভে যে ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি উদ্বোধন করেছে, তার সুনির্দিষ্ট অবস্থান নিশ্চিত করা হয়নি। রেভল্যুশনারি গার্ডসের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি বলেন, নৌবাহিনীর কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণের ঘাঁটিগুলোর মধ্যে এটি একটি। সেখানে রাখা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শত শত কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম এবং এর ধ্বংসক্ষমতা অনেক বেশি। শত্রুপক্ষের অত্যাধুনিক যুদ্ধসরঞ্জামকে এড়িয়ে আঘাত হানতে পারে এটি।

গত বছরই রেভল্যুশনারি গার্ডসের পক্ষ থেকে তাদের এই ঘাঁটির তথ্য সামনে আনা হয়। তখনই বলা হয়, ইরান উপসাগরীয় উপকূল বরাবর ভূগর্ভে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। এ ঘাঁটি নিয়ে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি শত্রুদের জন্য ‘দুঃস্বপ্ন’। রাষ্ট্রীয় টিভিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ক্ষেপণাস্ত্র শহরের বর্ণনায় বলা হয়েছে, সিমেন্টের দেয়ালসহ একটি ডিপোতে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সাজানো রয়েছে। এ ছাড়া রাডার, মনিটরিং, সিমুলেশন এবং অত্যাধুনিক নানা যুদ্ধাস্ত্র সেখানে রয়েছে। গার্ডস কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামির ভাষ্য, ‘আমরা আজ যা দেখছি, তা বিপ্লবী গার্ডের নৌবাহিনীর দুর্দান্ত এবং বিস্তৃত ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতার ক্ষুদ্র একটি অংশ।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক থিওডোর কারাসিক আরব নিউজকে বলেছেন, ইরান কীভাবে তার ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি শক্তিশালী করে তুলেছে এবং ক্ষেপণাস্ত্রের নতুন বৈকল্পিক পরীক্ষা ও নির্মাণও করছে, তা এ শহর দেখিয়ে দিয়েছে। সউদী আরবের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামদান আল শেহরি আরব নিউজকে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরানের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং তাতে অংশগ্রহণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান রাখে। নতুন এই ভিডিও চিত্র তাদের সক্ষমতার পরিচয় দেয়। তবে ইরানের এই বাড়াবাড়িতেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো চুপ করে আছে।

মার্কিন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইরানের অস্ত্রভান্ডারে মূলত স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এক ডজনের বেশি ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আছে ইরানের। এর মধ্যে কিয়াম-১ নামের ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ৭০০ কিলোমিটারের বেশি। ৭৫০ কেজি ওজনের বিস্ফোরক এটি বহন করতে পারে। ২০১৭ সালে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল ইরান। অন্যদিকে শাহাব-৩ প্রকৃতিগতভাবে ব্যালিস্টিক মিসাইল, যার পাল্লা দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) বলছে, ইরানের ৫০টির বেশি মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল লঞ্চার ও ১০০টির বেশি স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল লঞ্চার রয়েছে। সম্প্রতি আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা করায়ত্ত করার চেষ্টা করছে ইরান। এর জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চলছে।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধে ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে একটি মাইলফলক চুক্তি সই হয়। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। কারণ হিসেবে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ওই চুক্তিতে ফাঁক রয়ে গেছে। সেখানে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন বন্ধের কোনো কথা নেই। এরপরই ট্রাম্প ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করা তার অন্যতম প্রধান লক্ষ্যে পরিণত করেন। এ জন্য নতুন অবরোধসহ যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত কূটনৈতিক চাপে ইরান বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে ট্রাম্পের ওই চাপে ইরান তাদের দৃঢ়তা দেখায়। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র দেশটি নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের জানান দিয়ে বুঝিয়ে দেয় তারা যুক্তরাষ্ট্রের চোখরাঙানি উপেক্ষা করতে জানে।

সূত্র: প্রেস টিভি।

সর্বশেষ সংবাদ

কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না নয়: আইজিপি

পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দায়ের করা মামলাসমূহ যথাযথভাবে তদন্ত করতে হবে। কোনো...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ