দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস-বিডিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষা নির্দিষ্ট সময়েই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। আগামী ২ এপ্রিল (শুক্রবার) সম্পূর্ণ আগের নিয়মেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার (২৪ মার্চ) দুপুরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির গণমাধ্যমকে জানান, আমি জানতে পেরেছি পরীক্ষা পেছানো হচ্ছে না। অন্যান্য বছর তো অক্টোবর-নভেম্বরে পরীক্ষা হয়ে যায়। এ বছর করোনার কারণে তারিখ এমনিতেই অনেকটা পিছিয়ে গেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার (২১ মার্চ) পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে রিট করা হয়। তাইমুর খান বাপ্পি নামে একজনের পক্ষে রিটটি করেন আইনজীবী মুনতাসির মাহমুদ রহমান। এতে শিক্ষা সচিব, স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া, কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা হয়নি। তার পরও মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি তাদের সঙ্গে বৈষম্য। এতে পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বেন।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর করা রিটটি শুনানির জন্য মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) হাই কোর্টের কার্যতালিকায় ছিল। তবে গতকাল এর ওপর শুনানি হয়নি, আজও যথারীতি কার্যতালিকায় রয়েছে।
এদিকে, গত ৪ মার্চ দুপুরে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে ভর্তি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় পরীক্ষা না পেছালে অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে তারা বলেন, করোনার কারণে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তিবিষয়ক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভর্তি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। তাহলে মেডিক্যালের পরীক্ষা কেন পেছানো হবে না?
পরীক্ষা আয়োজনের আগে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের টিকা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ভর্তিবিষয়ক জটিলতা নিরসনে দেশের বাকি সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমতা রেখে ঈদুল ফিতরের পর মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হোক।
মেডিক্যালে ভর্তিতে ২৮২টি আসন বাড়ছে
দেশের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তিতে ২৮২টি আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুনামগঞ্জে নতুনভাবে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ এবং অন্য ১৭টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মেডিক্যাল ভর্তির বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, ওই বছর সরকারি মেডিক্যাল কলেজের আসন সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৬৮টি। এবার নতুন একটি মেডিক্যাল কলেজে (বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ, সুনামগঞ্জ) প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি নেবে। এতে আসন সংখ্যা রয়েছে ৫০টি। তাছাড়া আগের মেডিক্যালগুলোতে এবার আসন সংখ্যা বেড়েছে ২৩২টি। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সব মিলিয়ে ২৮২টি আসন বাড়ছে।
আগের নিয়মেই হবে ভর্তি পরীক্ষা
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার ভর্তির আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়তে পারে, এমন সম্ভাবনা থেকেই এক লাখ ২১ হাজার পরীক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। পরে এ সংখ্যা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার করা হয়েছে। অতিরিক্ত চাপ সামলাতে কেন্দ্রের সংখ্যা না বাড়িয়ে ভেন্যুর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, দেশে সরকারিভাবে পরিচালিত ৩৭টি মেডিক্যাল কলেজে আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৩৫০টি। মোট আসনের মধ্যে সাধারণ কোটায় ৪ হাজার ২৩০টি, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় (২ শতাংশ) ৮৭টি, উপজাতি কোটায় নয়টি, অ-উপজাতি কোটায় তিনটি এবং অন্যান্য জেলার উপজাতি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য আটটি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
দেশের সরকারি, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস এবং ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিটগুলোর বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে। বরাবরের মতো সারাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টালের জন্য একটিই গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।