আগামী ২৯ মার্চ (সোমবার) দিবাগত রাতে সারাদেশে পালিত হবে পবিত্র শবেবরাত। এ উপলক্ষে ৩০ মার্চ দেশের শেয়ারবাজার (ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ) বন্ধ থাকবে।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, শবেবরাত উপলক্ষে আগামী ৩০ মার্চ সারাদেশের সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দাফতরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এরই অংশ হিসেব দেশের শেয়ারবাজারও বন্ধ থাকবে। ৩১ মার্চ (বুধবার) থেকে উভয় শেয়ারবাজারে লেনদেন স্বাভাবিকভাবে চলবে।
‘ভাগ্য রজনী’ হিসেবে পরিচিত শবে বরাতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াতসহ ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে থাকেন। এজন্য শবে বরাতের পরের দিন বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে।
শবে বরাত উদযাপন
শবে বরাত রজনীটি ইসলামের প্রচারক হযরত মুহাম্মাদ (সা) বা তাঁর অনুচরবর্গ স্ব-স্ব জীবদ্দশায় কখনো পালন করেছেন বলে সহীহ সনদে বর্ণিত কোন তথ্যনামায় পাওয়া যায় না। তবে, বেশ কিছুকাল আগে থেকেই মুসলিম বিশ্ব সাড়ম্বরে রজনীটি উদযাপিত হয়ে আসছে। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ইরান, লেবানন, তুরস্ক, আফগানিস্তান সহ প্রভৃতি দেশে শবে বরাত ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালনের রেওয়াজ আছে। [১] বিশেষত ইরানে রজনীটি ভিন্ন মাত্রায় সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়। এ রাতে ছাত্রাবাসসমূহে আনন্দ উৎসব পালিত হয়। বিজয় তোরণ তৈরি করা হয়। মিষ্টি ও শরবত বিতরণ করা হয়। রাস্তায়-রাস্তায় ইমাম মাহদির আগমন নিয়ে গান গাওয়া ও শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ ছাড়া ১৫ শাবান ইরানি আচার প্রথা অনুযায়ী দিন-রাত মিলাদ ও দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
তবে সালাফি মধ্যপ্রাচ্য এ রাতটিকে উদযাপন করে না। সালাফিদের কেউ কেউ এ রাতটির তাৎপর্যের কথা স্বীকার করলেও এ রাত উদযাপন করাকে সমর্থন করেন না। এ রাত উদযাপনকে ‘বিদআহ’ বা নবউদ্ভাবন হিসেবে পরিত্যাজ্য বলে তারা বিশ্বাস করেন।
বাংলাদেশে শবে বরাত
বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশে শবে বরাত পালনের এক দীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ গড়ে উঠেছে। শবে বরাত উপলক্ষে প্রতিটি বাড়িতে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন স্বাদের খাবার। এসবের মধ্যে রয়েছে রুটি, বিভিন্ন রুচির হালুয়া, সুজি, মিষ্টান্ন। বিকেলে বা সন্ধ্যায় পাড়া প্রতিবেশিদের মাঝে এসব খাবার বিতরণ ও পরিবেশন করা হয়। এতে সামাজিক হৃদ্যতা ও সৌহার্দের সম্পর্ক গড়ে উঠে বলে স্থানীয় মুসলিম গণ বিশ্বাস করে থাকেন। এই রাতে অলি-গলি, রাস্তা-ঘাট সর্বত্র আলোক সাজসজ্জা করা হয়। আতশবাজি উৎসব দেখা যায়।
শবে বরাত উপলক্ষে ১৪ই শাবান দিন থেকেই ঘরে ঘরে রুটি, হরেক প্রকার হালুয়া ও বিচিত্র সব মিষ্টান্ন তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। বিকেলের মধ্যে এগুলো সম্পন্ন হলে, পাড়া-প্রতিবেশিদের মধ্যে বিতরণ করা শুরু হয়। এতে পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ পড়ে যায়। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন বিশেষ আলোচনা, দোয়া মাহফিল ও ধর্মীয় সভার আয়োজন করে। এশার নামাজের শুরু থেকে, বিশেষত মাগরিবের নামাজের পর থেকেই, মসজিদ পানে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ঢল নামে। প্রায় সকল মসজিদেই শবে বরাত শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাতভর ইবাদত বন্দেগির নিমিত্তে সারা বাংলাদেশের সমস্ত মসজিদ পুরো রাত উন্মুক্ত থাকে। মসজিদের পাশাপাশি বাসা-বাড়িতেও রাতভর ধর্মপ্রাণ মুসলিমগণ নামাজ, তিলাওয়াত, জিকির-আজকার ও বিভিন্ন ইবাদত করে থাকেন। প্রয়াত হয়ে যাওয়া আত্নীয়-স্বজনের সমাধি পরিদর্শন এ রাতের এক বিশেষ অনুষংগ হিসেবে দৃষ্ট হয়।
শবে বরাত উপলক্ষে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। জাতীয় পত্রিকাগুলো এ দিন বিশেষ ক্রোড়পত্র ও সাময়িকী প্রকাশ করে। ১৫ ই শাবানের কার্যদিবসটি অর্থাৎ শবে বরাতের পর আসন্ন দিনটি বাংলাদেশে সাধারণ ছুটির দিন হিসবে পালিত হয়। সর্বস্তরের পেশাজীবীরা এ দিন বাধ্যতামূলক ছুটি উপভোগ করে থাকেন।