অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় এগিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেছেন, ‘এক সময় খাদ্যের অভাবে গ্রামে গ্রামে লঙ্গরখানা থাকত; এখন নেই। মানুষ বস্ত্রহীন থাকত; এখন আর এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এভাবে চিকিৎসা, শিক্ষাসহ মানুষের সব মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা হয়েছে, যা বর্তমান সরকারের অবদান।’
রোববার (২১ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পোল্ট্রি মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’-এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, গত দশ বছরে মানুষের গড় আয়ু ৬৫ বছর থেকে বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে। তা এমনিতে হয়নি, খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তার পাশাপাশি মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে বলেই আয়ু বাড়ছে। সরকারের একান্ত প্রচেষ্টায় সব ক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ অনন্য উচ্চতায় এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের রিজার্ভ পার্শ্ববর্তী সব দেশের তুলনায় বেশি। এর কারণ গুড ম্যানেজমেন্ট। বর্তমান সরকার র্যামিটেন্স পাঠালে প্রণোদনা দিচ্ছে। ১০০ টাকা বিদেশ থেকে পাঠালে তার পরিবার ১০২ টাকা পাচ্ছে। এ কারণে হুন্ডি করছে না কেউ। সবার টাকা র্যামিটেন্সে যোগ হচ্ছে।
রেজাউল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে অচিরেই যুক্ত হতে যাচ্ছে। করোনা মহামারি সত্ত্বেও বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তার নির্দেশনার কারণেই কোভিডের সময় একদিনও মন্ত্রণালয়ের কাজ বন্ধ ছিল না। যার কারণে করোনার মধ্যেও উদ্যোক্তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ। এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আব্দুল জব্বার শিকদার, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল জলিল। এছাড়া টিভি টুডের এডিটর ইন চিফ মনজুরুল আহসান বুলবুল ও দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম অ্যাওয়ার্ডের জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন বহুগুণ এগিয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে ভুল ও অপপ্রচারের কারণে এ খাতের উদ্যোক্তাদের বড় ক্ষতি হয়। তিনি প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের উদ্ধৃতি দিয়ে একবার দুধে মেলামাইন রয়েছে এমন খবর প্রচারের পরে দুগ্ধশিল্পে দারুণ ক্ষতি হয়।
তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি- কিছু দিন পরপর ডিম, দুধ, মাছ, মাংস নিয়ে অপপ্রচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। এ অপপ্রচার রোধে ও জনসচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিপিআইসিসির সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে ফিড তৈরি কাঁচামালের দাম ৩০-৪০ শতাংশ বেড়েছে, ফ্রেইট খরচ দ্বিগুণ হয়েছে, বিগত প্রায় একবছর ব্রয়লার খামার ও ব্রিডার ফার্মগুলোকে উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি করছে।
কোভিডের ধকল কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর সময় লাগবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির জন্যও তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এজন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি কর কাঠামো এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত পোল্ট্রিখাতের জন্য কর অব্যাহতি সুবিধা।
তিনি বলেন, পাটের ব্যাগে মৎস্য ও প্রাণিখাদ্যের মোড়কীকরণ বিজ্ঞানসম্মত নয়। এতে খাদ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়, ছত্রাকের সংক্রমণে বিষক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। পাটের ব্যাগের দাম পিপি ওভেন ব্যাগের চেয়ে অন্তত ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টি জানিয়েছে; কিন্তু কাজ হচ্ছে না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানাসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, মানুষের খাদ্যপণ্য না হলেও ফিড তৈরির ক্ষেত্রে তদারকির দায়িত্ব বিএসটিআইকে দেয়া হয়েছে। একই পণ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, বিএসটিআই দুটি সংস্থা তদারকি করতে পারে না। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, তথ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে আইন ও বিধিমালা সবই আছে। মানসম্পন্ন ল্যাব আছে। তাছাড়া প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রতি সাভারে একটি কোয়ালিটি ল্যাবও স্থাপিত হয়েছে। এরপরেও বিএসটিআইয়ে ফিড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেটা বাতিল করা প্রয়োজন।