টিকার ডোজের স্বল্পতার কারণে বন্ধ হয়ে থাকা করোনা গণটিকাদান কর্মসূচি পুনরায় শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্রের সংগ্রহে থাকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ডোজগুলো চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে মেক্সিকো। দেশটির সরকার আশা করছে, আগামী শুক্রবারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এই অনুরোধের উত্তর দেবে।
মঙ্গলবার মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্সেলো এব্রার্ড মঙ্গলবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দেশের বর্তমান সংকট যুক্তরাষ্ট্র সরকার জানিয়েছি এবং অনুরোধ করেছি, তাদের স্টকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার যে ডোজগুলো রয়েছে, সেগুলো যেন আমাদের দেওয়া হয়। আশা করছি আগামী শুক্রবারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই অনুরোধের উত্তর দেবে।’
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে যে কয়েকটি দেশে এ রোগে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে, তাদের মধ্যে মেক্সিকো অন্যতম। করোনাভাইরাস ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বলছে, দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৭২৯ এবং এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানে মারা গেছেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৯৪৪ জন।
২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকা দিয়ে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করে মেক্সিকো, কিন্তু টিকার ডোজ সরবরাহে বিলম্ব হওয়ায় গত প্রায় ১ মাস ধরে দেশটিতে স্থগিত রয়েছে কর্মসূচি।
ইতোমধ্যে গত ১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বর্তমান এই সমস্যা তুলে ধরেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা, সমর্থন ও সংহতি প্রত্যাশা করছি। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, যদি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সহযোগিতা করে, তাহলে এপ্রিল শেষ হওয়ার আগেই দেশের ষাটোর্ধ্ব সব নাগরিককে টিকার আওতায় আনতে পারবে সরকার।’
যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য এ পর্যন্ত তিনটি করোনা টিকার অনুমোদন দিয়েছে দেশটির খাদ্য ও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। এগুলো হলো— ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না এবং জনসন অ্যান্ড জনসন। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন যদিও এখনও দেয়নি এফডিএ, তবে এই টিকার বেশ কিছু পরিমাণ ডোজ মজুত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগ।
সংগ্রহে থাকা এই টিকার ডোজগুলো দেওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে হোয়াইট হাউসে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের এক মুখপাত্র রয়টার্সের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যে স্পষ্ট বলেছেন, আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সকল নাগরিককে টিকার আওতায় আনা। এরপর যদি টিকার ডোজ বাড়তি থাকে, সেক্ষেত্রে সেগুলো অন্যান্য দেশকে দিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
টিকার ডোজের সংকট লাঘবে চীনের টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানি সিনোভ্যাক বায়োটেকের সঙ্গে ইতোমধ্যে মেক্সিকো সরকারের চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্সেলো এব্রার্ড। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছর মেক্সিকোতে ২ কোটি করোনা টিকার ডোজ সরবরাহ করবে সিনোভ্যাক বায়োটেক।
সূত্র: রয়টার্স