মিয়ানমারে পহেলা ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে অব্যাহত প্রতিরোধ বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। রোববার ছিল সেনা অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে এদিন সৈন্যরা গুলি চালালে ৫০ জনের মত মারা গেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে দেশের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে।
জানা গেছে সেনাবাহিনী সারা দেশ জুড়ে আরো নতুন নতুন এলাকায় কঠোরভাবে সামরিক আইন আরোপ করতে শুরু করেছে।
অভ্যুত্থানের পর থেকে অং সান সুচি কোথায় রয়েছেন তা পরিষ্কার নয়। তাকে অজ্ঞাত জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে। সোমবার তাকে আদালতে হাজিরের কথা থাকলেও ভার্চুয়াল শুনানি মুলতবি করা হয়।
ইয়াঙ্গনে চীনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা :
সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ হচ্ছে মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী ও দেশের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে। রোববার ওই শহরে চীনা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা হলে শহরের দু’এলাকায় সামরিক আইন জারী করা হয়।
ইয়াঙ্গনের হ্লাইং থারাইয়ার এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে যেগুলো চীনা বিনিয়োগে তৈরি। চীনারা বলছে তাদের কারখানাগুলো বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে, ফলে তাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন।
চীন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা রড, কুঠার ও পেট্রোল নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে অন্তত দশটি কারখানার ক্ষতিসাধন করেছে। এগুলো মূলত তৈরি পোশাকের কারখানা কিংবা গুদাম। একটি চীনা হোটেলও হামলার লক্ষ্যে পরিণত হয়।
মিয়ানমারের চীন দূতাবাস তাদের ফেসবুক পাতায় লিখেছে, কারখানাগুলোতে লুঠপাট হয়েছে। বহু চীনা নাগরিক আহত হয়েছে এবং অনেকে আটকে পড়েছে।
ওই এলাকায় রোববার দিনভর গুলির শব্দ শোনা যায়। রাস্তায় সেনাবাহিনীর ট্রাক দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীর বালির বস্তা, টায়ার ও কাঁটাতার দিয়ে অবরোধ তৈরি করে। কিছু বিক্ষোভকারীকে দেখা যায় অস্থায়ী ঢাল তৈরি করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আহতদের উদ্ধার করার জন্য।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে একজন স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই তিনজন আহত ব্যক্তি মারা গেছে।’ এদিকে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, পুলিশের একজন সদস্যও সেখানে নিহত হয়েছে।
মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীরা মনে করে চীন বার্মিজ সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে, রোববারের চীনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলার পেছনে কে বা কারা ছিল তা পরিষ্কার নয়।
রোববারের রক্তপাতের পর আজ (সোমবার) ইয়াঙ্গন ও মানদালে শহরের নতুন নতুন এলাকায় সামরিক আইন জারী করা হয়। অর্থাৎ এসব এলাকায় বিক্ষোভকারীদের এখন সামরিক আদালতে বিচার করা যাবে।
তবে সোমবারও মানদেলেহ শহরের কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে বলে জানা গেছে। মধ্যাঞ্চলীয় মিনগিয়ান এবং অংলান শহরেও বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালিয়েছে বলে জানা গেছে।
ঠাণ্ডা মাথায় গুলি:
বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সংবাদদাতা জনাথন হেড বলছেন রোববার সৈন্যদের ঠাণ্ডা মাথায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। তিনি বলন, ‘সৈন্যরা যেভাবে মৃতদেহ ও আহতদের টেনে টেনে সরিয়েছে তাতে স্পষ্ট যে কোনো দয়ামায়া তারা দেখাতে রাজী নয়।’
‘সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একাধিক ভিডিও ফুটেজ দেখেই বোঝা যায় বেসামরিক লোকজনকে তারা কতটা অগ্রাহ্য করে। অস্ত্র উঁচিয়ে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে…সেনাবাহিনী দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। বাইরের বিশ্বের উদ্বেগ-ক্ষোভ তারা পাত্তাই দিচ্ছেনা।’
বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, ‘যে সরকারকে তারা ক্ষমতাচ্যুত করেছে তাদের সাথে আপোষের কথা বিবেচনা করার বিন্দুমাত্র কোনো লক্ষণই সেনাবাহিনী এখনো দেখাচ্ছে না।’
সূত্র : বিবিসি