ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পুনর্নিমাণ চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই ডাক দিয়েই শুক্রবার স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উৎসবের (আজ়াদি কা অমৃত মহোৎসব) সূচনা করেন তিনি।
রাজনৈতিকদের মতে, এর মাধ্যমে স্বাধীনতার কংগ্রেসময় ইতিহাস পাল্টাতে চান মোদি। নেহরু-গান্ধী পরিবারের উপর থেকে অন্তত কিছুটা আলো সরিয়ে তুলে ধরতে চান ইতিহাসে উপেক্ষিতদের অবদান। তেমনই স্বাধীনতার মূল লক্ষ্যের সঙ্গে কৌশলে মেশাতে চান নিজের সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পকেও। যাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে সংঘের তেমন ভূমিকা না থাকার অভিযোগ মোছার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন অনেকে।
এদিন সাবরমতী আশ্রমে প্রধানমন্ত্রী বলেন, (গান্ধীর) ডান্ডি-যাত্রার দিনেই এই মহোৎসবের সূচনা করা হল। স্বাধীনতার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, প্রত্যন্ত কোণায় যত আন্দোলন হয়েছে, তা দেশের সামনে সেভাবে আসেনি। কিন্তু আসা উচিত ছিল। এই প্রসঙ্গে কুকা, ভিল, মুন্ডা, চম্পারণ, চুয়ার, বিরসা মুন্ডার সংঘর্ষের প্রভূত প্রশংসা করেন মোদি। তামিলনাড়ু থেকে মিজোরাম, গুজরাত থেকে উড়িষ্যা বিভিন্ন প্রান্তে নানা দলিত, আদিবাসী নেতা ও গোষ্ঠীর আন্দোলনের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্যান্য বহু নেতার সঙ্গে এদিন মাত্র একবার জওহরলাল নেহরুর নাম উল্লেখ করতে শোনা গেছে মোদিকে। বারবার বলেছন বল্লভভাই প্যাটেল, মোহনদাস গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বের কথা। এর আগে খোদ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়েও মোদি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের যাবতীয় কৃতিত্ব দাবি করে একটিমাত্র দল, একটি পরিবার।
কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলোও বারবার মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতার লড়াইয়ের সঙ্গে আরএসএস কিংবা জনসঙ্গের যোগ ক্ষীণ। সেই অভিযোগ মুছে স্বাধীনতার উৎসবকে মোদি তার নিজের ভাবমূর্তির সঙ্গে একাত্ম করতে চাইছেন বলে ধারণা অনেকের। মোদির দাবি, স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল ভরকেন্দ্র আত্মনির্ভরতা। যা তার সরকারেরও লক্ষ্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই উৎসবের মাধ্যমে মোদি সরকারের সঙ্গে প্রান্তিক, দলিত, পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করতে চান। তেমনই আবার এই মেগা উৎসবের মাধ্যমে কেন্দ্রের নীতিগুলোর সঙ্গে কার্যত একাত্ম করতে চান স্বাধীনতা সংগ্রামকে।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গুরুত্ব কমিয়ে নতুন এক অধ্যায়ের জন্ম দিতে চান মোদি। সেই কারণে দেশের অকথিত সংগ্রামের কাহিনীগুলোর ডিজিটাল সংস্করণ তৈরির প্রকল্পে ছাত্র-যুব সমাজকে শামিল হওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, আদিবাসীদের সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে আলাদা সংরক্ষণাগার হবে। সূত্র: আনন্দবাজার