জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টি কখনই পরগাছা হয়ে রাজনীতি করবে না। জাতীয় পার্টির নিজস্ব রাজনীতি আছে, নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়েই রাজনীতির মাঠে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো জোটেই নেই। বর্তমানে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে চায় না, জাতীয় পার্টিও আওয়ামী লীগকে চায় না। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সাথেও আমাদের কান যোগাযোগ নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশকে জুলুমখানায় পরিণত করেছে, আমরা দেশের মানুষকে সকল জুলুম নির্যাতন থেকে মুক্তি দেবো। আমরা বিরোধী দলে আছি, সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আমরা দেশের মানুষের পক্ষে কথা বলবো।
আজ দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান-এর বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে পার্টির যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যদের সাংগঠনিক সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ১৯৯১ সালের পর থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। দুটি দলই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, দুর্নীতি ও দলীয়করণের মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। দেশের মানুষের অধিকার হরণ করে দেশের মানুষকে জিম্মি করেছে। ৯১ সালের পর থেকে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সুশাসন নির্বাসনে দিয়েছে। দুর্নীতি ও দলীয়করণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কবর দিয়েছে। সকল স্তরে দলীয়করণের মাধ্যমে লুটপাটের মাধ্যমে টাকার পাহাড় গড়েছে দুটি দলের নেতা-কর্মীরা। তারা হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে বিদেশে বিলাসী জীবন যাপন করে। ছোটখাটো নির্বাচনে তারা কোটি কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নামে।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের এসময় আরো বলেন, দেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে চায় না। কারণ, তারা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। দেশের মানুষ দিশেহারা, তারা এই দুটি দলের হাত থেকে মুক্তি চায়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে দুঃশাসন সৃষ্টি করেছে, আমরা দেশের মানুষের জন্য প্রকৃত গণতন্ত্র উপহার দেবো।
এসময় গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, ১৯৯১ সালের পর সংবিধান সংশোধন করে সাংবিধানিকভাবেই একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি স্তম্ভের মধ্যে সরকার প্রধানের হাতে নির্বাহী বিভাগ ও আইন সভা আর রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে বিচার বিভাগের নিরানব্বই ভাগই সরকার প্রধানের হাতে। তাই সরকার প্রধান যা চান, তাই হচ্ছে – এটাকে গণতন্ত্র বলা চলে না। দুর্নীতি ও দলীয় করণের মাধ্যমে একনায়কতন্ত্র এখন স্বৈরতন্ত্রের পর্যায়ে। সরকারী দল না করলে এখন আর কেউ চাকরী পায় না, ব্যবসা করতে পারে না। সরকার দলীয়দের জন্য এক ধরনের আইন আর অন্যদের জন্য আলাদা আইন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি স্পষ্ট বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। অথচ এই বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতেই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো। স্বাধীনতার আগে পশ্চিম পাকিস্তানীরা বৈষম্য সৃষ্টি করেছিলো, এখন বৈষম্য সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আমরা মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। দেশের মানুষ ভোট দিতে পারলে কখনোই ভুল করে না।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিটি নির্বাচনে যাবে। চ্যালেঞ্জ ছাড়া কোনো নির্বাচনেই কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না। তবে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম প্রেসিডিয়াম সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এসময় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। নির্যাতনের শিকার লেখক মুশতাক জেলখানায় মারা গেছেন। নির্যাতিত কর্টিুনিষ্ট কিশোর জামিন পেয়েছে মুশতাকের মৃত্যুর পরে। দেশের মা-বোনরা ধর্ষিত হচ্ছে, বিচার পাচ্ছে না। তিনি বলেন, শুধু ভৌগলিক স্বাধীনতার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়নি। বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্যই আমাদের একাত্তরের মুক্তি সংগ্রাম। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, দেশের প্রশাসন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, নির্বাচন কমিশন বর্তমানে ঠুঁটো জগন্নাথ। আওয়ামী লীগ এখন সরকারে আছে, আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়। আওয়ামী লীগ দেশে ফ্যাসিবাদ চালু করেছে। বসুরহাটের মত ভাগাভাগি নিয়ে সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ। ফরিদপুরের উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে আহবান জানান জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
এসময় আরো বক্তৃতা করেন কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী মীর আব্দুস সবুর আসুদ, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, মোহাম্মদ নোমান মিয়া, আমির উদ্দিন আহমেদ ঢালু, মো. শামসুল হক, এডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী, মো. আমির হোসেন ভূঁইয়া, ইকবাল হোসেন তাপস, মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জুলফিকার হোসেন, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, আলহাজ্ব মো. আব্দুর রাজ্জাক, এনাম জয়নাল আবেদিন, হুমায়ুন খান, আনোয়ার হোসেন তোতা, লেঃ কঃ (অব.) শাব্বির আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফিজুর রহমান বাবুল, সৈয়দ ইফতেকার আহসান হাসান, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন খালেদ, মাখন সরকার, কাজী আবুল খায়ের, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মাসুদুর রহমান মাসুম, সুলতান মাহমুদ, এম.এ. রাজ্জাক খান, শাহাদৎ কবীর চৌধুরী, শংকর পাল, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক ভূঁইয়া, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, মিজানুর রহমান মিরু, বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. রেজাউল করিম বাসেত, গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক এম.এ. সুবহান, অ্যাড. সেরনিয়াবাদ সিকান্দার আলী, অ্যাড. মো. তারেক, শারমিন পারভিন লিজা, যুগ্ম সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মাশুকুর রহমান, শাহনাজ পারভিন, ডা. সেলিমা খান।