আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে করা জরিপে এগিয়ে রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। এছাড়া ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আসন সংখ্যা কমতে পারে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সিএনএক্স-এর দ্বিতীয় দফা জনমত জরিপে এই ফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৭টি বেছে নিয়ে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে এই জরিপ করা হয়েছে। তখনও পর্যন্ত কোনো দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়নি। মোট ৯ হাজার ৩৬০ জনের মতামতের ভিত্তিতে সিএনএক্স-এবিপি আনন্দ জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা স্পষ্ট।
জরিপে বলা হয়েছে, নির্বাচনে তৃণমূল পেতে পারে ১৫৪ থেকে ১৬৪টি আসন। বিজেপি জিততে পারে ১০২ থেকে ১১২টি। বাম–কংগ্রেস পেতে পারে ২২ থেকে ৩০টি এবং অন্যরা পেতে পারে একটি থেকে ৩টি আসন।
অবশ্য এই ধরনের জরিপের ফল অনেক সময়ই মেলে না। তবে নির্বাচনের ভবিষ্যৎ বোঝার ক্ষেত্রে এই ধরনের জনমত জরিপ একটি স্বীকৃত পদ্ধতি।
পশ্চিমবঙ্গের ভোট নিয়ে সিএনএক্স প্রথম জরিপটি করেছিল মাসখানেক আগে। সেখানে আসন-সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছিল, তৃণমূল পেতে পারে ১৪৬-১৫৬টি আসন। বিজেপি পেতে ১১৩-১২১টি আসন। বাম-কংগ্রেস ২০-২৮টি আসন এবং অন্যরা ১-৩টি আসন।
নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে কোনো দল বা জোটকে কমপক্ষে ১৪৮টি আসন পেতে হবে। সেদিক থেকে সিএনএক্স-এর প্রথম জরিপে তৃণমূলের নূন্যতম আসন সম্ভাবনা ১৪৮ না হলেও দ্বিতীয় দফা জরিপে সেই সম্ভাবনা কিছুটা উজ্জ্বল হয়ে কমপক্ষে ১৫৪-তে পৌঁছেছে। সর্বোচ্চ আসন পাওয়ার সংখ্যা ১৫৬ থেকে ১৬৪-তে পৌঁছতে পারে, বলছে জরিপ।
অন্যদিকে, প্রথম সমীক্ষায় বিজেপির ন্যূনতম আসন পাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল ১১৩টি, এবার তা কমে হয়েছে ১০২টি। একইভাবে সর্বোচ্চ আসন প্রাপ্তির সম্ভাবনাও ১২১ থেকে কমে হয়েছে ১১২টি। বাম-কংগ্রেসের অবস্থান দুই জরিপেই মোটামুটি এক। প্রথম জরিপে ছিল ২০-২৮টি। আর দ্বিতীয় জরিপে ২২-৩০টি।
ভোট পাওয়ার শতকরা হারে অবশ্য দুই জরিপেই তৃণমূল একই জায়গায় দাঁড়িয়ে— ৪২ শতাংশ। তবে বিজেপির ভোট ৩৭ শতাংশ থেকে কমে ৩৪ শতাংশ হতে পারে বলে জরিপে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তবে বাম-কংগ্রেসের ভোট ১৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০ শতাংশ হতে পারে জরিপে জানানো হয়েছে।
জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবারের মতো এবারও এগিয়ে আছেন। কিন্তু দুর্নীতি এবং পরিবারতন্ত্রের ক্ষেত্রে তার দলের খুব ভাল ছবি জরিপে ফুটে ওঠেনি। জরিপে তৃণমূলের দুর্নীতির কথা বলেছেন ৫৯ শতাংশ, পরিবারতন্ত্রের দিকে আঙুল তুলেছেন ৬৯ শতাংশ আর সাম্প্রদায়িকতার কথা বলেছেন ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে বিজেপির ক্ষেত্রে আবার সাম্প্রদায়িকতার তকমা দিয়েছেন ৬০ শতাংশ, দুর্নীতি ৪১ শতাংশ আর পরিবারতন্ত্র ৩১ শতাংশ।
জরিপ অনুযায়ী, ৩৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন মমতা ‘এটা আমার ভোট’ বলায় লাভবান হবেন। ৩৩ শতাংশ মনে করেন, তাতে লাভ হবে না। আবার মতামত জানাতে পারেননি ২৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
একই ভাবে শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগে তৃণমূল ধাক্কা খেতে পারে বলে মনে করছেন ৪৯ শতাংশ মানুষ। আর ৩২ শতাংশ মনে করেন তা হবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হল, ১৯ শতাংশ মানুষ এই প্রশ্নে কোনো স্পষ্ট মত দেননি।
জরিপে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতাকে পছন্দ করেছেন ৪৩ শতাংশ মানুষ। বিজেপির দিলীপ ঘোষ ২৪ শতাংশ সমর্থন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে। আর জরিপে অংশ নেওয়া ৬১ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন, সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করলে ভোটে লাভবান হতে পারে বিজেপি।