spot_img

ভিনদেশে উইঘুর-সিরিয়ানদের চোখে একই স্বপ্ন

অবশ্যই পরুন

নিজভূমে পরবাসী চীনের উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়। শোষণ-বঞ্চনা আর বর্বর নির্যাতনই তাদের চিরসঙ্গী। অন্য দিকে পশ্চিমা ষড়যন্ত্রে সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ থেকে দীর্ঘ যুদ্ধে দীর্ণ সিরিয়ার ভূমি। প্রাণ বাঁচাতে দুটির দেশের অসংখ্য মানুষ ঠাঁই নিয়েছে ইউরোপের মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্কে। বিস্তর সাংস্কৃতিক ফারাক সত্ত্বেও ভিনদেশে ভিন্ন দুই জাতিগোষ্ঠী জীবনের নতুন আয়োজনে পরস্পর সমব্যথী, দরদি বন্ধু।

১৯৯০ এর দশকে উইঘুর মুসলিমরা চীনের জিনজিয়াংয়ে তাদের বাড়িতে অত্যাচারের মুখে পড়ে পালিয়ে প্রথম তুরস্কে আসা শুরু করেছিলেন। এক সময় আশ্রয় ও জীবন বাঁচানোর তাগিদে ছুটে আসা উইঘুররা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের সহায়তা করছেন। দুই দেশের নিপীড়িত দুই জনগোষ্ঠীর অনন্য মেলবন্ধন ঘটেছে এখানে। তাদের মধ্যে দেশ ও সংস্কৃতির পার্থক্য থাকলেও এক ক্ষেত্রে তারা সবাই এক। তা হলো তারা মুসলিম।

ঐতিহাসিক শহর আনাতোলিয়ার কায়সারি এলাকার একটি রাস্তায় ফুটবল খেলছে একদল শিশু। অন্যতম উল্লেখ যোগ্য বিষয় হলো তারা উইঘুর ও সিরিয়ান।

খেলা করা শিশুদের মধ্যে ১৩ বছর বয়সী মোয়াজ সবার বড়। সে ৫৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ তৌফিকের পাঁচ সন্তানের একজন, যিনি ছয় বছর আগে সিরিয়ার হোমস থেকে পরিবার নিয়ে পালিয়ে এখানে এসেছেন। তার দুটি ছেলে এখন বড় হয়েছে এবং বাসা থেকে চলে গেছে। ছোট তিনটি- মোয়াজ এবং তার দুই বোন কাইসারিতে তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে।

এক সময় সফল ব্যবসায়ী ছিলেন তৌফিক। সিরিয়ায় তার নিজস্ব গার্মেন্টস কারখানা ছিল। এখন তিনি পুরনো জিনিসের ব্যবসা করেন। কায়সারিতে তুর্কিস্তান মহল্লায় দুই রুমের একটি বাসায় বাস করেন তৌফিক। এই মহল্লার নাম দিয়েছে ১৯৯০ সালে এখানে আশ্রয় নেয়া চীনের উইঘুররা।

দুই জনগোষ্ঠীর মানুষই সহিংসতা থেকে বাঁচার জন্য এখানে পালিয়ে এসেছেন। তুর্কিস্তান মহল্লায় একে অপরকে নিজেদের পরিবারের মতোই মনে করেন উইঘুর সিরিয়ানরা।

দুই জাতি মিলে তৈরি হচ্ছে এক সম্প্রদায়

শীতের বিকেলে মোয়াজরা খেলা শেষ করে একসঙ্গে তাদের বাড়ির আঙিনায় বসে। পুরনো জিনিস দিয়ে তার বাবার তৈরি চেয়ারে বসে তারা। বড়রা তাদের সঙ্গে তুর্কি চা পান করে।

এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুবাদকের কাজ করে শিশুরা। কারণ তারা স্থানীয় স্কুলে তুর্কি ভাষা শিখছে। বড়দের মধ্যে উইঘুররা উইঘুর ভাষা এবং সিরিয়ান শরণার্থীরা আরবি ভাষায় কথা বলেন। তবে উইঘুরদের কাছে তুর্কি ভাষা শেখা অনেকটাই সহজ কারণ তাদের ভাষার সঙ্গে এই ভাষার অনেক মিল রয়েছে। যদিও সিরিয়ানদের তুর্কি ভাষা শিখতে বেশ বেগ পেতে হয়, কারণ আরবির সঙ্গে তুর্কি ভাষার খুব বেশি মিল নেই। মোয়াজের ছোট বোন তাকিয়া (১৫) দুই জাতিগোষ্ঠীর বাচ্চাদেরই তুর্কি শেখান।

৪৫ বছর বয়সী উইঘুর আবু কাসিম এবং সিরিয়ান তৌফিকের পরিবার পাশাপাশি বাস করে। দুই পরিবারের মাঝে তিন বছর ধরে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাদের বাচ্চারাও একে অপরের বন্ধু।

উইঘুর ও তুর্কি ভাষায় আবু কাসিম বলেন, আমাদের প্রথম বন্ধন মানবতার। তারপর আমাদের ধর্ম। এরপর আমাদের ব্যথা ভাগ করে নেওয়ার।

চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলের কাশগর শহরের বাসিন্দা ছিলেন আবু কাসিম। একাধিক সন্তান থাকার কারণে চীনা কর্তৃপক্ষের নির্যাতনের শিকার হয়ে তুরস্কে পালান তিনি। চীনে তার পরিবার কী ধরনের নির্যাতন সহ্য করেছেন সে বিষয়ে এখন আর বেশিকিছু বলতে চান না আবু কাসিম।

চীন থেকে পালিয়ে আসার দুর্গম যাত্রা সম্পর্কে আবু কাসিম বলেন, ২০১৫ সালে স্ত্রী ও শিশুদের নিয়ে জিনজিয়াং ছেড়ে পায়ে হেঁটে সীমানা পাড়ি দিই। এরপর মধ্য এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ পার করে তুরস্কে পৌঁছাতে সক্ষম হই। এই পথ পাড়ি দিতে ছয় মাস লেগেছিল। এজেন্টদের ৫ হাজার ডলার দিতে হয়েছিল। তারপরও আমরা নিরাপদ কোনো স্থানে যেতে পারবো কি না সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা ছিল না।

সিরিয়া থাকে পালিয়ে আসা তৌফিকের গল্পটিও অনেকটা একই রকম। গোলাবর্ষণ ও বোমা হামলা থেকে বাঁচতে ২০১৫ সালে সিরিয়া থেকে তারা তুরস্কে পালিয়ে আসেন। তিনি বলেছিলেন, আমি দেখেছি কীভাবে আমার বাড়ি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। এমন হামলার পর কখনো কল্পনা করিনি যে কোনো বাড়িতে আমাদের পরিবার একসঙ্গে আবার এমন বসবাস করতে পারব। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আমি এখানে থাকতে পেরে খুশি, যেখানে প্রাণহানির কোনো আশঙ্কা নেই।

তৌফিক জানান, তিনি তার উইঘুর বন্ধুদের সমর্থন করেন এবং সহায়তা করেন। তারা অত্যন্ত সভ্য। তারা আমাদের চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি দেখেছে। যখন আমার পুত্র তাদের ওপর অত্যাচারের গল্প শোনায় তখন আমি আমার নিজের ব্যথা ভুলে যাই।

তৌফিকের পাশের বাড়ি আবদুল জব্বারের। জব্বার (৪০) একজন উইঘুর এবং তার স্ত্রী, রফিকা (৩৪) সিরিয়ান শরণার্থী। তারা চার বছর আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং তাদের চারটি সন্তান রয়েছে। এখানকার অনেক উইঘুর ও সিরিয়ান শরণার্থীর মতো জব্বার কায়সিরির শিল্পাঞ্চলে একটি কারখানায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা বন্ধুদের মাধ্যমে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমরা দুটি ভিন্ন সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত, বিশ্বের দুটি পৃথক অংশের মানুষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই মহল্লা বসবাসের জন্য সেরা জায়গা।

আরবিভাষী রফিকা ভাঙা ভাঙা উইঘুর ভাষা জানেন। তবে জব্বারের সঙ্গে তাদের কথা হয় তুর্কি ভাষায়। জব্বার জানান, তার জন্য আরবি শেখা খুবই কঠিন। তাদের রান্নাঘরে উইঘুর ও সিরিয় উভয় খাবারই রান্না হয়।

বিশ্বের ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আসা দুই জাতিগোষ্ঠী যেন এক নতুন সম্প্রদায় গড়ে তুলেছে আনাতোলিয়ার এই শহরতলিতে। এখানে বাস করা শরণার্থীরা জানান এটি (তুরস্ক) তাদের দ্বিতীয় বাড়ি।

সূত্র : আল-জাজিরা

সর্বশেষ সংবাদ

আইপিএলের নিলামে এক বছরে ‘৪৯ সেঞ্চুরি’ করা ১৩ বছর বয়সী বৈভব

সময়ের সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। যেখানে দেখা মেলে, হালের অন্যতম সেরা তারকাদের। অনেকের মতে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ