বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন দেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছে চীন সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এছাড়া, রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ টিকা আমদানির প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে রাশিয়াও এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে বলে জানা গেছে।
উপহার হিসেবে চীন দুই লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেবে বলে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে। তবে এর পরিমাণ আরও বেশি বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
তিনি বলেন, ‘চীন বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে ভ্যাকসিন দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর পরিমাণ দুই লাখ ডোজের চেয়েও বেশি। আমরা তাদের প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি’।
বিভিন্ন দেশের উদ্ভাবিত কোভিড ভ্যাকসিন যেন বাংলাদেশে উৎপাদন করে, সে বিষয়েও দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নানের মোবাইল ফোনে কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।
চীন তাদের উদ্ভাবিত সিনোভ্যাকের টিকার বাংলাদেশে ট্রায়াল দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। বাংলাদেশে ট্রায়াল হলে ১০ লাখ ডোজ টিকা বিনামূল্যে দেওয়ার প্রস্তাবও করেছিল দেশটি। তবে ট্রায়ালের অর্থের যোগান নিয়ে দুই দেশের মতবিরোধের কারণে শেষ পর্যন্ত ওই ট্রায়াল আর হয়নি।
পরে প্রতিষ্ঠান আনহুই জেফেই লংকম বায়োলজিক ফার্মাসি নামের চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান গত নভেম্বরে বাংলাদেশের তাদের টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল, যা শেষ পর্যন্ত আর আগায়নি।
পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, তুরস্ক, জর্ডান, আলজেরিয়া ও ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশ চীনা সরকারি প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের কোভিড ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে।
ভারত বাংলাদেশকে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে ভারত থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা আমদানি করছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ভারত আমদানির ৫০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে সরবরাহ করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খানের সভাপতিত্বে গত ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, ইতোমধ্যে চীন বিনামূল্যে ২ লাখ ভ্যাকসিন দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং রাশিয়াও তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিন দিতে সম্মত আছে। তবে ভ্যাকসিন আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তার সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সভায় বলেন, রাশিয়ার উৎপাদিত টিকা আমদানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শুধু ভারতের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে অন্যান্য উৎস থেকেও ভ্যাকসিনের আমদানির চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের জনসন এন্ড জনসন উদ্ভাবিত টিকা এক ডোজ ব্যবহারেই ভালো ফল পাওয়ায় বিভিন্ন দেশে এর প্রতি বাড়তি আগ্রহ দেখা দিয়েছে। জনসনের ভ্যাকসিন আমদানির ব্যাপারে আলোচনা চলছে বলে গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান।