একটি সমাজের অর্ধেক যদি অকেজো থাকে, সেই সমাজটা তো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে, নারী-পুরুষ সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে।
জাতীয় শিশু একাডেমিতে সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আয়োজনে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই সমাজকে যদি আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলে এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে।
‘সমাজকে যদি আমাদের গড়ে তুলতে হয়, নারী পুরুষ সকলে শিক্ষা দিতে হবে। আর প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও আমরা বলছি যে, প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রশিক্ষণ নিতে পারে, যাতে যেকোনো কাজে যেন মেয়েরা নিজেদের যোগ্যতা দেখাতে পারে।’
নারী উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর দর্শন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজকে যদি উন্নত করতে হয়, অর্ধেক যারা, নারী সমাজ- তাদের উন্নতি ছাড়া একটি সমাজ উন্নত হতে পারে না। একটি সমাজ এগিয়ে যেতে পারে না।’
দাবি আদায়ের বক্তৃতা দিলেই দাবি আদায় হয় না জানিয়ে নারীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারীদের অধিকার দাও, নারীদের অধিকার দাও বলে যে শুধু চিৎকার করা, বলা আর বক্তৃতা দেয়া, এতে কিন্তু অধিকার আসে না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। আদায় করার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আর সেই যোগ্যতা আসবে শিক্ষা, দীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।’
মুজিববর্ষে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকটা মানুষকে আমরা ঘরে করে দেব। ঘরের মালিকানা দেয়ার সময় নারী পুরুষ দুজনের নামেই আমরা দিয়ে দিচ্ছি। যাতে মেয়েদের কোনোরকম নির্যাতন বা বঞ্চিত হতে না হয়। তারা যেন সুরক্ষিত থাকে, সেই ব্যবস্থাটা নিয়েছি।’
নারীদের সুরক্ষায় নানা আইন প্রণয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাতৃত্বকালীন ছুটি তিন মাস ছিল। সেটা ছয়মাস করে দিয়েছি। বাবার নামই সন্তানের পরিচয়ে ছিল। মায়ের স্থান ছিল না। মার পরিচয়টাও সন্তানের পরিচয়ে সম্পৃক্ত করে দিয়েছি। আসলে মায়ের না সন্তানের পরিচয়ে থাকা একান্তভাবে দরকার।’
‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’- এই প্রতিপাদ্যে উদযাপিত হচ্ছে এবারের নারী দিবস। এদিন নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, অধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা পাঁচ নারীকে দেয়া হয় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা।
এবার শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন: অর্থনৈতিকভাবে সফল বরিশালের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হাছিনা বেগম নীলা, শিক্ষা ও চাকরি ক্যাটাগরিতে বগুড়ার মিফতাহুল জান্নাত, সফল জননী হিসেবে পটুয়াখালীর হেলেন্নেছা বেগম, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিজান এবং সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখা নড়াইলের অঞ্জনা বালা বিশ্বাস।
তাদের সবার হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্মাননা তুলে দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের প্রত্যেককে জয়িতা পদক, এক লাখ টাকা ও সনদ দেয়া হয়।
যারা নিজের জীবনে শতকষ্টের মধ্যেও একাত্তরের নির্যাতন আর দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হয়েও ভেঙে পড়েনি। বরং সমাজে উঠে দাঁড়িয়েছে তাদের খুঁজে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মান দেয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলেকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এরাই প্রকৃত জয়িতা, যাদেরকে আপনারা খুঁজে পেয়েছেন।’
নিজের অনুভূতি জানাতে এসে হাছিনা বেগম নীলা বলেন, ‘যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ৩। দেশের টানে আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে যান, কিন্তু আর কখনও ফিরে আসেনি।’
নিজের শৈশবের অবর্ণনীয় কষ্টের স্মৃতিচারণ করেন নীলা। জানান, এখন সাফল্যের স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। তাই জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চান অসহায় ও পিছিয়ে পড়া নারীদের সাবলম্বী করার জন্য।