দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে দুজন বিদেশফেরত, অন্যজন দেশে থাকা তাদের পরিবারের এক সদস্য।
প্রথম শনাক্তের ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রথম মৃত্যু ঘটে রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগে। এরপর থেকেই প্রতিদিন শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
গত বছরের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ছিল। ২ জুলাই একদিনে চার হাজার ১৯ জন আক্রান্ত হন। আর জুন মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল। ৩০ জুন একদিনে সর্বাধিক মৃত্যুর রেকর্ড হয় ৬৪ জন।
চলতি বছরের ৮ মার্চ (সোমবার) দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত এক বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে একমাত্র আইইডিসিআর ছাড়া করোনা পরীক্ষার জন্য আর কোথাও আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি ছিল না। বর্তমানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২১৯টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১১৮টি, জিন-এক্সপার্ট ২৯টি, র্যাপিড অ্যান্টিজেন ৭২টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪১ লাখ ৩২ হাজার ২১৩টি।
গত বছরের ৮ মার্চ থেকে চলতি বছরের ৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ হাজার ৪৬২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৩ হাজার তিন জন। এখন করোনা পজিটিভ রোগী আছেন ৪৭ হাজার ৩২৭ জন। মৃতদের মধ্যে ৭৫ দশমকি ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ছয় হাজার ৩৯৭ জন পুরুষ এবং ২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ অর্থাৎ দুই হাজার ৬৫ জন নারী। সর্বোচ্চ ৮০ দশমিক ৪৩ শতাংশই অর্থাৎ ছয় হাজার ৮০৬ জন ছিল ৫০ বছরের বেশি বয়সের মানুষ। তাদের বেশির ভাগই আগে থেকে নানা ঝুঁকিপূর্ণ রোগে আক্রান্ত ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে এখনো প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ৭ মার্চ সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১৪ হাজার ৫৪টি। পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৯২ জনের। নতুন শনাক্ত হয়েছে ৬০৫ জন এবং সুস্থ হয়েছে এক হাজার ৩৭ জন। আর মারা গেছেন ১১ জন।
এর মধ্যে সর্বশেষ গড় অনুসারে দৈনিক শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৪০ শতাংশ, মৃত্যুহার ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
অধিদপ্তরের সূত্র মতে, দেশে এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন ছয় লাখ ৩০ হাজার ৯৮৫ জন। ছাড়পত্র নিয়েছেন পাঁচ লাখ ৯৯ হাজার ১৮৫ জন। পাশাপাশি এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন ১ লাখ ৯০৫ জন। আর ছাড়পত্র নিয়েছেন ৯১ হাজার ১৯১ জন। বর্তমানে আছেন নয় হাজার ৭১৪ জন।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতৃত্ব এবং নির্দেশনায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই দেশ আবার স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরে আসতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে চলতি বছরের গত ২০ জানুয়ারি দেশে করোনা ভাইরাসের টিকাও এসেছে। ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ওই টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারকে এরই মধ্যে সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আরও একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান জানান, গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টিকা দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৮০৪ জন। টিকা নিয়েছেন ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫২ জন। টিকা নেওয়ার পর মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ৮৪৮ জনের মধ্যে।
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, রাজধানী ঢাকায় ৫০টি হাসপাতাল ও সারাদেশে ৯৫৫টি হাসপাতালসহ সারাদেশে মোট এক হাজার পাঁচটি হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম চলবে। এসব হাসপাতালে দুই হাজার ১৯৬টি টিম কাজ করবে। অর্থাৎ মোট এক হাজার পাঁচটি হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৪০০টিম কাজ করবে। এছাড়াও ভ্যাকসিন বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য টিম প্রস্তুত রয়েছে সাত হাজার ৩৪৪টি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, চলমান কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে ব্যবহৃত কোভশিল্ড ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়ার ন্যূনতম ২ সপ্তাহ পর থেকে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ সক্ষমতা তৈরি হয়। তাই এই সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে করোনায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। সুতরাং ভ্যাকসিন নেওয়ার পূর্বে এবং পরেও মাস্ক ব্যবহারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মনে চলার অনুরোধ জানান তিনি।