প্রায় দুই মাস ৬৫ বছর বয়সী প্রেম সিং প্রতিদিন এক নিয়ম পালন করে আসছিলেন, যা তার অনিচ্ছায় একদিন বাদ পড়ে যায়।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর, ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় হরিয়ানা রাজ্যের কর্নাল জেলার মানপুরা গ্রামের নিজ বাড়ি ছেড়ে তিনি রাজধানী দিল্লিতে এসেছিলেন আরো হাজার হাজার কৃষকের সাথে এক বিক্ষোভে অংশ নিতে। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের পাশ করা কৃষি সংস্কার আইন বাতিলের দাবিতে এই কৃষকরা রাজধানীতে সমবেত হয়।
দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের সিঙ্গুতে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদে অংশ নেন কৃষক প্রেম সিং। বিক্ষোভে অবস্থান নিয়ে প্রতিদিন সকালেই গ্রামে তার ছেলে সন্দ্বীপ সিংয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করতেন।
৩৪ বছর বয়সী সন্দ্বীপ বলেন, ‘তার নিজের কোনো ফোন ছিল না।’
সিঙ্গু থেকে দুই শ’ ৬০ কিলোমিটার দূরের মানপুরা গ্রামের বাড়িতে বসে সন্দ্বীপ বলেন, ‘কিন্তু তিনি প্রতিদিনিই অন্য কারো ফোন থেকে আমাদের খবর নিতেন। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমি তার ফোনের প্রতীক্ষা করতাম। এটি একপ্রকার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’
২৬ জানুয়ারি এই নিয়মের লঙ্ঘন ঘটে।
অন্যদের সাথে সিঙ্গুতে একটি ট্রাক্টরে বসে থাকা প্রেম সিং সন্ধ্যা ৬টায় ওই বাহন থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান।
মারপুরার বাসিন্দা জগিন্দর সিং বলেন, ‘ওই সময় আমি তার সাথে ছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদ সমাবেশের স্থানে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তার লাশ সৎকারের জন্য গ্রামে নিয়ে আসি। কৃষকদের আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারীদের মধ্যে তিনি একজন।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার নতুন কৃষি আইন চালুর পর থেকেই ভারতজুড়ে বিশেষ করে দেশটির শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের কৃষকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
২৬ নভেম্বর থেকে রাজধানীর ভিন্ন ভিন্ন তিনটি স্থানে হাজার হাজার কৃষক অবস্থান নিয়ে এই আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা দাবি করছেন, নতুন আইন পণ্যের মূল্যের জন্য বড় বড় কোম্পানিগুলোর দয়ার ওপর তারা নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন।
শুক্রবার কৃষক বিক্ষোভের শততম দিনে কৃষকদের সংগঠন সংযুক্ত কৃষক মঞ্চ (এসকেএম) জানিয়েছে, এই পর্যন্ত অন্তত ২৪৮ কৃষক বিক্ষোভকালে মারা গেছেন।
স্বাস্থ্যগত কারণে কয়েক জনের মৃত্যু হলেও অন্যরা আত্মহত্যা করেছেন বলে জানায় এসকেএম।
শনিবার বিক্ষোভের অংশ হিসেবে কৃষকরা দিল্লির পশ্চিমের পেরিফেরাল এক্সপ্রেসওয়ের ছয় লেনের সড়ক পাঁচ ঘণ্টার জন্য অবরোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মৃত্যুর মিছিল সত্ত্বেও কৃষকরা বলছেন, তারা বিক্ষোভে অটল থাকবেন। তবে বিভিন্ন কারণেই তারা বাধার মুখোমুখি হচ্ছেন।
সন্দ্বীপ বলেন, ‘আমার মা এখনো স্বাভাবিক হননি। তিনি কারো সাথেই কথা বলছেন না। তাকে দেখাশোনা করার জন্য আমার ঘরে থাকা প্রয়োজন। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হলে সিঙ্গুতে আমার বাবার স্থান নিতে আমি যাবো।’
সূত্র : আলজাজিরা