চলতি বছরের শেষের দিকে বিশ্ব করোনাভাইরাস মহামারি কাটিয়ে উঠবে, এমন ভাবনা অবাস্তব বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সোমবার সংস্থাটির জরুরি বিভাগের পরিচালক মাইকেল রায়ান এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু কমানোর মাধ্যমে বিশ্বকে এই ভাইরাস সংকট থেকে বের করে আনা সম্ভব হতে পারে। টানা ছয় সপ্তাহ বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কম থাকার পর গত সপ্তাহে আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি বলেন, তারপরও ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
রায়ান বলেন, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই আমরা এই ভাইরাস শেষ করে দিতে যাচ্ছি— আমি মনে করি, এমন ভাবনা খুবই আগাম এবং অবাস্তব হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কর্মকর্তা বলেন, সম্মুখ-সারির স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং করোনাভাইরাসের তীব্র ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে আমরা ভীতি দূর করে মহামারির সংকট কাটিয়ে উঠতে পারি। তবে সাম্প্রতিক অগ্রগতিকে উপেক্ষা করা যাবে না এবং এই মুহূর্তে ভাইরাসটি অনেক নিয়ন্ত্রণে আছে।
আমি মনে করি, আমরা যদি বুদ্ধিমান হয়ে থাকি তাহলে হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু এবং করোনাভাইরাস মহামারির সঙ্গে সম্পর্কিত মর্মান্তিক সব ঘটনা দূর করতে পারবো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের পরিচালক মাইকেল রায়ান
এদিকে, সংস্থাটির মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, গত সপ্তাহে ইউরোপ, দুই আমেরিকা, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে করোনায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির এই চিত্র হতাশাজনক হলেও আশ্চর্যজনক নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় শিথিলতা, করোনার নতুন ধরনের অব্যাহত বিস্তার এবং সুরক্ষা ব্যবস্থায় জনসাধারণের ঢিলেমি দেওয়ার কারণে এটি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। টেড্রোস বলেন, টিকা মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে। কিন্তু দেশগুলো যদি শুধুমাত্র ভ্যাকসিনের ওপর নির্ভর করে, তাহলে তারা ভুল করবে। এই মহামারি মোকাবিলার অন্যতম প্রধান ভিত্তি হলো মূল জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলো মেনে চলা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল প্রধান মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেছেন, গত সপ্তাহ যদি আমাদের কিছু বলে, সেটি হলো— আমরা যদি শিথিলতা দেখাই, তাহলে এই ভাইরাস আবারও জেগে উঠবে। আমরা এটি চলতে দিতে পারি না।
চলতি বছরের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশেই করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু করতে চান টেড্রোস। যদিও তার এই লক্ষ্যমাত্রার বাকি আছে মাত্র ৪০ দিন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক টিকাদান প্রকল্প কোভ্যাক্সের প্রথম ধাপের ভ্যাকসিনের ডোজ সোমবার আফ্রিকার দেশ ঘানা এবং আইভরিকোস্টে পৌঁছেছে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে আরও বেশ কিছু দেশে এক কোটি ১০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন টেড্রোস।
আগামী মে মাস শেষ হওয়ার আগে বিশ্বের ১৪২টি দেশে আরও ২৩৭ মিলিয়ন ডোজ করোনা ভ্যাকসিন পৌঁছাবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি।
সূত্র: এএফপি।