দেশে আরও তিন কোটি ডোজ টিকা আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে দেশেও যেন এই টিকা উৎপাদন করা যায় সে বিষয়েও ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার, জানান তিনি।
শনিবার ( ২৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করায় প্রধানমন্ত্রী এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
করোনা ভাইরাস মহামারি দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যা যা করণীয় ছিল সেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘টিকার যখন গবেষণা চলছিল, তখন আমরা অ্যাডভান্স টাকা দিয়ে টিকার বুকিং করেছিলাম। যেখানেই পাওয়া যাক আমরা টিকা আগে আনবো, আমাদের দেশের মানুষকে সুরক্ষা দেবো-এটা ছিল আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং নির্দেশ দিয়েছি, স্কুল কলেজ, প্রাইমারি থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমস্ত শিক্ষক এবং কর্মচারীকে টিকা দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা হোস্টেলে থাকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশমতো যে বয়স পর্যন্ত দেওয়া যাবে না, তার ওপরের বয়স থেকে সবাইকে টিকা দিতে হবে। এটা আমরা দেবো, কারণ আমরা খুব দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে চাই, পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘সঙ্গে সঙ্গে এটাও চিন্তা করেছি, যারা মানুষের জন্য কাজ করে, মানুষের পাশে থাকতে হয়, তাদের টিকা দেওয়াটা আগে। আমরা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত প্রচার চালাচ্ছি, যেন সবাই এ টিকা নিতে আসে।‘
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি, আরও তিন কোটি ডোজ কেনার জন্য। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে করে আমাদের যেটা আছে, সেটা প্রথম ডোজ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজ আমরা শুরু করবো। সঙ্গে সঙ্গেই যেন আবার টিকা আমাদের হাতে এসে যায়। একটা মানুষও যাতে এই টিকা থেকে বাদ না যায়, তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’
দেশে যেন করোনা ভাইরাসের টিকা উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে দেশীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি কোনও দেশ উৎপাদন করতে না পারে, আমাদের দেশ উৎপাদন করতে পারবে। আমি আমাদের বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিকে ইতোমধ্যে বলেছি, কারা কারা এটা করতে পারবে, তার জন্য প্রস্তুত থাকা এবং সিড যাতে আনা যায়, তার ব্যবস্থা করা যায় কি-না, সেটাও আমরা দেখছি।’
তিনি বলেন, ‘মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া-এটা আমরা কর্তব্য। আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুধু না, জাতির পিতার কন্যা-এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সেই হিসেবেই আমি মনে আমি আমার কর্তব্য করে যাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, গত ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি এবং ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড-এর ৩ কোটি ডোজ টিকা আনার বিষয়ে চুক্তি করে। দেশে এ টিকা সরবরাহ করছে বেক্সিমকো ফার্মা। ইতোমধ্যে দুই দফায় কোভিশিল্ডের ৭০ লাখ টিকা দেশে এসেছে, সঙ্গে এসেছে ভারত সরকারের উপহার দেওয়া আরও ২০ লাখ টিকা। গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়েছেন ২৯ লাখ ৮৪ হাজার ৭৭৩ জন মানুষ।