যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার যুক্তরাজ্য ও কানাডা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বেশ কজন জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সু চির বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসেবে মিয়ানমার জেনারেলদের নিষিদ্ধ করলো যুক্তরাজ্য ও কানাডা।
বৃহস্পতিবার ( ১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে ওই নিষেধাজ্ঞা দেয়। কানাডার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ৯ জন জেনারেলের নাম আছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় মিয়ানমারের সামরিক সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল মিয়া তুন ও, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল সো তুত এবং উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল থান হ্লাইং রয়েছেন।
এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সিনিয়র জেনারেল অং মিন হ্লাইংসহ বর্তমান ও সাবেক ১০ জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। তাদের সবার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাসহ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এদিকে ইউরোপের ২৭টি দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্রাসেলসের একটি কূটনৈতিক সূত্র বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানায়, মিয়ানমারে অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ইইউ সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আগামী সোমবার বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক গারনিউ বৃহস্পতিবার রাতে এক টুইট বার্তায় জানান—মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর কানাডা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে মিয়ানমারের জনগণের পাশে আছি এবং তাদের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের প্রত্যাশার প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বিবৃতিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা ছাড়াও দমন-পীড়ন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, নির্বিচারে গ্রেফতারসহ অনেক অভিযোগ তুলেছেন।
এদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের সামরিক জেনারেলদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলেছেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, তারা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখবে না। জান্তা সরকার যাতে ব্রিটিশ সরকারের অর্থ না পায়, তা নিশ্চিত করতেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি ইইউয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে উঠবে।
নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে গত ১ ফেব্রুয়ারির ক্যুতে নেতৃত্ব দেওয়া মিয়ানমারের শীর্ষ জেনারেল ইইউ অঞ্চলে ঢুকতে পারবেন না। এ ছাড়া ইইউতে তাদের কোনও সম্পদ থাকলে তা বাজেয়াপ্ত হবে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, জেনারেলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও মিয়ানমারের সাধারণ জনগণ ও গণতন্ত্রায়নে ইইউয়ের অঙ্গীকার বজায় থাকবে।