১৯৬২ সালের চীন ও ভারত যুদ্ধ কাঁপিয়ে দিয়েছিল পুরো এশিয়াকে। বিতর্কিত হিমালয় সীমান্তই ছিল যুদ্ধের মূল কারণ। ১৯৫৯ সালের তিব্বত বিদ্রোহের পর ভারত যখন দালাই লামাকে আশ্রয় দিয়েছিল, তখন দু’দেশের মধ্যে বেশ কয়েক দফা সীমান্ত সংঘর্ষ ঘটে। চীনের সামরিক টহল ও রসদ সরবরাহে বাধা দেয়ার জন্য ভারত ১৯৬০ সাল থেকে একটি ‘ফরওয়ার্ড পলিসী’ গ্রহণ করে এবং ম্যাকমাহন লাইনসহ উত্তরের বেশ কয়েকটি সীমান্তে চৌকি স্থাপন করে, যা ১৯৫৯ সালে চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ঘোষিত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার পূর্বাংশ।
১৯৬০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহ্রু এবং চৌ এন লাইয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির ভিত্তিতে ভারতীয় এবং চীনা কর্মকর্তারা সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য আলোচনায় বসেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ভারত চীনের প্রস্তাবিত ক‚টনৈতিক বন্দোবস্ত লাগাতারভাবে প্রত্যাখ্যান করার পর চীন ক্রমেই কঠোর হতে শুরু করে এবং ১৯৬২ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে ভারত লাদাখে পূর্বে নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘ফরোয়ার্ড টহল’ পুনরায় শুরু করে।
চীন অবশেষে ১৯৬২ সালের ২০ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ সমাধানের সমস্ত প্রচেষ্টা ত্যাগ করে লাদাখের ৩ হাজার ২ শ’ ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ লম্বা হিমালয় সীমান্ত এবং ম্যাকমাহন লাইন পেরিয়ে বিতর্কিত অঞ্চল আক্রমণ করে। এ আলোচনার ব্যর্থতা একই বছর চীন-নেপাল শান্তি ও বন্ধুত্বের চুক্তি এবং বার্মার সাথে সফল চুক্তি দ্বারা জোরদার করা হয়। এভাবেই বিশ্বের দুটি সর্বাধিক জনবহুল দেশ দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্তে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে চীন ভারতকে একটি তিক্ত পরাজয়ের স্বাদ দেয়। এ যুদ্ধ উন্নয়নশীল বিশ্বে রাজনৈতিক সংহতির আশা ভাঙার পাশাপাশি, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিকে পুনর্গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল।
আজও ১৯৬২ সালের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দু’দেশের সীমান্ত বিরোধ ডোকলাম মালভ‚মিতে অনুরণিত হচ্ছে। ব্রিটিশ শাসনের পর গঠিত চীন ও ভারত উভয় সরকারই অপেক্ষাকৃত নতুন ছিল (ভারত তার স্বাধীনতার জয়লাভের দু›বছর পর ১৯৪৯ সালে বেইজিংয়ে পিপল্স রিপাবলিক অফ চায়না’র ঘোষণা করা হয়েছিল)। তাই দেশগুলির সশস্ত্র বাহিনীতে খুব একটা পার্থক্য ছিল না।
ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারতের বৃটিশ সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যের আলোকে শুক্তশালীভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল। উত্তর আফ্রিকা ও বার্মা সহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বড় বড় ভারতীয় বাহিনী লড়াই করেছে। এরাই পরবর্তীতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ভিত্তি গঠন করে। স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী প্রথমদিকে বেশিরভাগ পশ্চিমা যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে পরিচালিত হতো। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ১৯৪৭ সালে প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে।
অন্যদিকে, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) একটি সামরিক বিভাগ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে, যা দেশটির শহুরে ও গ্রামীণ উভয় শিকড়ে গেঁথে বসা একটি বিপ্লব সৃষ্টিকারী সংগঠন। গঠিত হওয়ার পর পিএলএ প্রায় বিশ বছর নিরবচ্ছিনভাবে বড় বড় লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। পিএলএ প্রথমে চিয়াং কাই-শেকের জাতীয়তাবাদী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে, এরপর ইম্পেরিয়াল জাপানিজ আার্মির বিরুদ্ধে এবং তারপর কোরিয়ায় আমেরিকান নেতৃত্বাধীন জাতিসংঘ জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
সূত্র : ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট, উইকিপেডিয়া, ইন্টারনেট। (চলবে)