পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যেই রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলছে ইরান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইরান যদি চুক্তি অনুযায়ী পারমাণবিক প্রকল্প থেকে সরে আগের অবস্থানে যায় তাহলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু ইরানি নেতারা বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে তারা তা করবেন না। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজ উইক এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।
খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন চাপ মোকাবিলায় মিত্রদের দ্বারস্থ হচ্ছে তেহরান। একই সঙ্গে তারা সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের আঞ্চলিক হুমকি মোকাবিলাও করছে। ২০১৫ সালে পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরের আগে ধুঁকছিল ইরানের অর্থনীতি। চুক্তির পর ২০১৮ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেদের প্রত্যাহার করে নিলে আবারও নিষেধাজ্ঞা বহাল হয়। বিপাকে পড়ে ইরানের অর্থনীতি।
যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলেও অন্য স্বাক্ষরকারী রাশিয়া, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য চুক্তির প্রতি এখনও শ্রদ্ধাশীল রয়েছে। যদিও ইরানি নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকির কারণে ইউরোপিয়ানরা চুক্তির শর্ত মেনে চলছে না।
রাশিয়া ও চীন একাধিকবার চুক্তি থেকে ট্রাম্পের সরে যাওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেছে। বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, কোনো শর্ত ছাড়াই চুক্তিতে ফিরে আসার জন্য। সম্প্রতি তেহরান এই দুটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে মনোনিবেশ করেছে।
করোনা মহামারিতে ইরান অর্থনৈতিক ও মানবিক দিক দিয়ে সংকটে পড়েছে। তেহরান বারংবার অভিযোগ করে আসছে, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের ভাইরাসবিরোধী উদ্যোগ জটিলতায় পড়ছে। তবে দেশটির নেতারা মার্কিন সহযোগিতা প্রত্যাখ্যান এবং পশ্চিমা ভ্যাকসিন আমদানি নিষিদ্ধ করেছে।
রাশিয়ার স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিন বিতরণে মস্কোর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে তেহরান। একই সঙ্গে নিজেদের একটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও চালিয়ে যাচ্ছ্ দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ এই সপ্তাহে রাশিয়া সফরে গেছেন দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। যদিও করোনা উদ্বেগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক বাতিল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাশিয়া ও ইরানের রেল কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোর নিয়ে আলোচনায় বসেছেন। এই প্রকল্পটি ভারত ও রাশিয়াকে ইরান, আজারবাইজান ও অন্য দেশ হয়ে সংযুক্ত করবে।
ইরানি স্পিকার রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে গেলেও বেইজিংয়ের সঙ্গেও সমানতালে আগাচ্ছে দেশটি। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার মুখে চীন দেশটির ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে বেইজিংই প্রথম ইরানের তেল আমদানি করার উদ্যোগ নেয়।
ইরানের নববর্ষ উপলক্ষে বেইজিংকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন কালিবাফ। এতে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, উভয় দেশ নিজেদের সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করবে।
গত সপ্তাহে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ চীনের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। খুব শিগগিরই তা বাস্তবায়ন শুরু হবে।
ফেব্রুয়ারি মাসেই রাশিয়া, চীন ও ইরান তাদের দ্বিতীয় নৌ মহড়া আয়োজন করবে। ২০১৯ সালের প্রথমবারের মতো মহড়া আয়োজন করা হয়েছিল। ভারত মহাসাগরে এই সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করছে না। তিনি বলেন, সবার উচিত যুক্তরাষ্ট্রকে পুরোপুরি জানা। দেশটির শক্তি কমছে। এতে করে এই অঞ্চলে তাদের মিত্ররা হতাশ এবং নীরব। দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার অবদমন দেখছে বিশ্ব।