মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে গৃহবন্দি রয়েছেন দেশটির শতাধিক আইনপ্রণেতা। সেনা অভ্যুত্থানের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি এবং তার সঙ্গে আটক হওয়া মন্ত্রিপরিষদের বাকি সদস্যদের অবস্থান এখনো জানা যায়নি। যদিও এমপিরা নেপিদোর আবাসিক কমপ্লেক্সেই গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে খবরটি জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপি।
সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে সামরিক বাহিনীকে গত নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফলকে সম্মান জানানো এবং আটককৃতদের সবাইকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। দলের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল সংবিধানের পরিপন্থি। এতে করে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতাকে অবহেলা করা হয়।
একজন এমপি জানিয়েছেন, তিনি এবং আরও প্রায় ৪০০ আইনপ্রণেতা নেপিদোর আবাসিক কমপ্লেক্সে পরস্পরের সঙ্গে এবং ফোনে তাদের নির্বাচনি এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। তবে তাদের ওই আবাসন কমপ্লেক্স থেকে বেরুতে দেওয়া হচ্ছে না।
এমপিদের আবাসিক কমপ্লেক্সে পুলিশ ও সেনাসদস্যদের উপস্থিতির কথাও জানান এই আইনপ্রণেতা। তিনি জানান, কমপ্লেক্সের ভেতরে পুলিশ এবং বাইরে প্রহরায় রয়েছে সেনাসদস্যরা। সেখানে সু চির দলসহ অন্যান্য ছোটখাটো দলের এমপিদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। জান্তা সরকার তাদেরও ধরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে; এমন শঙ্কায় নিদ্রাহীন রাত কাটছে এমপিদের।
আরও পড়ুন : মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে জাতিসংঘ
গত সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে অভিযান চালিয়ে সু চি এবং ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করা হয়। রাজধানী নেপিদো ও প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় রাস্তায় টহল দিতে শুরু করে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এরপর সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যুত্থানের খবর নিশ্চিত করে সেনাবাহিনী।
এনএলডির মুখপাত্র মিয়ো নিউন্ট রয়টার্সকে বলেন, রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা, প্রেসিডেন্ট ও অন্য শীর্ষ নেতাদের ভোরেই অভিযান চালিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বন্দিদের মধ্যে রয়েছেন বৌদ্ধ ভিক্ষু সোয়ে নিয়া ওয়ার সায়াদাওয়া। এই ভিক্ষু সু চির এনএলডির সমর্থক।
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালেও সেনা ও দাঙ্গা পুলিশ রাস্তায় টহল দেয়। রাজধানীতে হেলিকপ্টার চক্কর দিতেও দেখা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনা ও পুলিশের গাড়ি অবস্থান করছে। ইয়াঙ্গুনের পরিস্থিতিও একই রকম।
সোমবার বন্ধ করে দেওয়া ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা হয়েছে। দোকান-পাট এখনো বন্ধ রয়েছে। এমনকি চালু হয়নি ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরও। তবে খুব শিগগিরি ব্যাংক খুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।