বৃটেনকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহের ক্ষেত্রে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। ইইউ’র স্বাস্থ্য কমিশনার জোর দিয়েছেন, কয়েক মাস আগে অর্ডার দেয়া স্বত্বেও বৃটেনের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত নয়। স্টেলা কিরিয়াকাইডস বলেছেন, আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিক যুক্তি প্রত্যাখ্যান করি। এটি কোনো কসাইয়ের দোকানে কাজ করতে পারে, কিন্তু চুক্তিতে নয়।
ব্রাসেলস অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃক বৃটেনের জন্য উৎপাদিত কয়েক মিলিয়ন করোনভাইরাস ভ্যাকসিন ডোজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। অ্যাঙ্গেলা মার্কেল সিডিইউ পার্টিতে থাকা পিটার লিস আগেই বলেছিলেন, ব্রাসেলস বেলজিয়ামে তৈরি ফাইজার/বায়োএনটেক এর চালানকে বাধা দিতে পারে। ইতোমধ্যে এই শিল্পের অভ্যন্তরীণ লোকজন আশঙ্কা করছেন, ব্রাসেলস বৃটেনের ভ্যাকসিন নিয়ে ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ হিসেবে চালিত করার চেষ্টা করতে পারে। যদি তা হয় তবে ‘লক্ষ লক্ষ মানুষের মানবাধিকারের সমস্যা’ হয়ে উঠবে। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তারা ইঙ্গিত করেছেন যে, তারা ইইউ’র দাবিতে বাঁকবে না।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বৃটেনের ৭৫ মিলিয়ন কোভিড ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির প্রয়াসকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে বলেছেন, আমরা চুক্তিতে খুব আত্মবিশ্বাসী এবং আমাদের ভ্যাকসিন সরবরাহের ক্ষেত্রে অনেক আত্মবিশ্বাসী আর সেই ভিত্তিতে সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এই বছরের প্রথমার্ধে প্রায় অর্ধেক ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে ফার্মা জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
এমন খবরের পর ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়েছে। মার্চ মাসের শেষ নাগাদ ২৭টি দেশের এই অঞ্চলকে ৮ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করার কথা। তবে উৎপাদন ঘাটতির জন্য এখন ৩ কোটি ১০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাবে ব্লকটি।
ইউরোপীয় কমিশনের স্টেলা কিরিয়াকাইডস টুইটারে জানিয়েছেন, ইইউ ও সদস্য রাষ্ট্রগুলো ভ্যাকসিন ডোজ কমে যাওয়াতে গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছেন। ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ইইউতে ভ্যাকসিন সরবরাহের চুক্তি রক্ষা করতে বাধ্য। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করা হলে ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইতালি।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউরোপে অনুমোদন পাওয়ার পর ভ্যাকসিন সরবরাহে আমাদের কোনও বিলম্ব হবে না। তবে ইউরোপীয় সাপ্লাই চেইনে উৎপাদন জটিলতার জন্য প্রাথমিকভাবে যে প্রাক্কলন করা হয়েছিল, ভ্যাকসিনের পরিমাণ সেটির চেয়ে কম হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ইউরোপীয় ইউনিয়নে কয়েক কোটি ডোজ সরবরাহ করা হবে। কারণ আমরা উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছি।
ইইউ এখনও অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। আশা করা হচ্ছে, ২৯ জানুয়ারি এই অনুমোদন দেয়া হবে। এর আগে মার্কিন কোম্পানি ফাইজারও ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভ্যাকসিন সরবরাহ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনও কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
ইউরোপীয় কমিশন বলেছে যে, অ্যাংলো-সুইডিশ সংস্থাটি বেলজিয়ামের সাইটে উৎপাদনের সমস্যা সত্ত্বেও চুক্তিভিত্তিক নিয়মাবলি পালন করতে বাধ্য। অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পাসকেল সোরিয়ট ইইউর ভ্যাকসিন স্টিয়ারিং বোর্ডের সাথে গতকাল সন্ধ্যায় একটি বৈঠকে অংশ নিয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের ভ্যাকসিন তৈরির পরিমাণ বাড়ানোর জটিলতা এবং আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয়েছি সে সম্পর্কে আমাদের গঠনমূলক এবং উন্মুক্ত কথোপকথন হয়েছিল।
আরো বলেছেন, মহামারী চলাকালীন কোন লক্ষ্যে লাভ না করে কয়েক মিলিয়ন ইউরোপীয়দের কাছে আমাদের ভ্যাকসিন আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখায় আমরা আসন্ন মাসগুলিতে ভ্যাকসিন সরবরাহের লক্ষ্যে যৌথভাবে চার্ট করার জন্য আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি।