জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, দেশের মানুষ নির্বাচনের প্রতি অনীহা প্রকাশ করেছে। দেশের মানুষ এখন আর ভোট দিতে যায় না।
তিনি বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে মানুষের সেবা করতেই রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতি। আর ক্ষমতা গ্রহণের একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। কিন্তু এখন শুধু একটি দলই নির্বাচনে জয়লাভ করছে। তাই অন্যান্য দলগুলোর রাজনীতিতে টিকে থাকাই দুরুহ হয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, ফলাফল যাই হোক, জাতীয় পার্টি প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ ছাড়া কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবে জাতীয় পার্টি। যারা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করবে তাদের জাতীয় পার্টি থেকে বহিস্কার করা হবে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে গাজীপুর জেলা জাতীয় পার্টি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের এসব কথা বলেন।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, আদালতের রায়ে ১৯৯০ সালে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একজন বৈধ রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি সাংবিধানিক নিয়ম মেনেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। তাই একজন বৈধ রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলন কখনোই বৈধ হতে পারে না।
তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে দেশ পরিচালনায় অপারগ হয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। বিএনপি ছাড়া আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দল সেনাবাহিনীর ওই ক্ষমতা গ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছিল। আওয়ামী লীগের মুখমাত্র দৈনিক বাংলার বাণীসহ সকল পত্রিকা স্বাগত জানিয়ে রিপোর্ট করেছিলো তখন। তাই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছিলেন একথা সঠিক নয়।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ১৯৯০ সালের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে যা স্বৈরতন্ত্র। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে একটি দল সরকার গঠন করে সেই দলের প্রধান সংসদ ও সরকার প্রধান হন। সংবিধানের ৭০ ধারার কারণে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে সরকারদলীয় সদস্যরা সংসদে ভোট দিতে পারেনা। তাই প্রধানমন্ত্রী যা চান তাই পাশ হয়, তিনি যা চাননা তা পাশ হয় না।
করোনা ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আবারো দেশের প্রতিটি নাগরিককে বিনামূল্যে করোনা টিকা সরবরাহের দাবি জানান। বলেন, শুরু থেকেই জাতীয় পার্টি করোনা ভ্যাকসিন পরিবহন, সরবরাহ এবং টিকা দেয়ার জন্য দক্ষ কর্মী বাহিনী তৈরীতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের নীতিমালা সাধারণ মানুষের কাছে পরিস্কার নয়। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেই, দেশের মানুষ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার ওপর আস্থা রাখে না। সরকারি হাতপাতালের চিকিৎসকরাই বেসরকারিভাবে চিকিৎসা দিচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশের মানুষের চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয় না।
এসময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও জাতীয় পার্টি প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোটারদের সামনে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উন্নয়ন ও সুশাসনের চিত্র তুলে ধরা হবে। বাজারে নতুন পণ্যে সয়লাব তারপরও দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে জবাবদিহিতা নেই তাই সরকার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে চিন্তিত নয়। সরকারি দলের নেতারা নিজেদের ভাগ্য নিয়ে ব্যস্ত। দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে আবার করোনাকালে প্রায় দেড় কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। অথচ সরকার মানুষের দুঃখ-কষ্ট বোঝে না।
এসময় গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভার নব-নির্বাচিত কাউন্সিলর কামরুজ্জামান মন্ডল জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
উপস্থিত ছিলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, আজম খান, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গোলাম মোস্তফা, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, মোস্তফা আল মাহমুদ, হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, তারেক এ আদেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, এনাম জয়নাল আবেদীন, আনোয়ার হোসেন তোতা, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরু, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম সরকার, যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম, কেন্দ্রীয় সদস্য জিয়াউর রহমান বিপুল, গাজীপুর নেতা সাইফুল ইসলাম, শরিফ খান, এনামুল হক, জাকির কবির সিকদার, শাহজাহান মোল্লা, মিনহাজ, লতিফসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।