আগামী ২৫ থেকে ২৯ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’-এর সম্মেলন। এই উপলক্ষে প্রতিবার সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা সমবেত হলেও এবারের ছবিটা আলাদা। করোনা মহামারীর কারণে এবার দাভোস সম্মলেন হবে অনলাইনে। ফলে সেখানে সেই চেনা ব্যস্ততার ছবি থাকবে না।
দাভোস সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, জার্মান চ্যান্সেলার ম্যার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখ্যোঁ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সুগা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনলাইনে ভাষণ দেবেন। ট্রাম্পের সময়ে অ্যামেরিকার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। এখন বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বভার নিয়েছেন। ফলে ভবিষ্যতে অ্যামেরিকার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কী হবে, সেই বিষয়ে তার মত জানাতে পারবেন শি জিনপিং। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন, ইউরোপীয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লেগার্ডে, আইএমএফের ম্যানেজিং ডিরেক্টরও থাকবেন।
গত ৫০ বছর ধরে এই বার্ষিক সম্মেলন চলছে। বিশ্বের রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক নেতা ও প্রমুখ সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্টরা দাভোসে একত্রিত হন এবং আলোচনা করেন। এবছর এই সম্মেলন আরো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্ব এখন আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা প্রচুর বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে অসাম্য বাড়ছে। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ) একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাব যেভাবে আর্থিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে পড়েছে, তার ফলে সামাজিক অস্থিরতা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিতে পারে। ডাব্লিউইএফের প্রধানের মতে, আর্থিক দিক থেকে প্রতিটি দেশের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া আরো দ্রুত ও দীর্ঘস্থায়ী হতে হবে এবং সকলের কাছে তার সুফল পৌঁছতে হবে।
করোনাকালে বিভিন্ন দেশের সরকার নিজেদের জাতীয় স্বার্থকেই সবকিছুর আগে রেখেছে। একতরফাভাবে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। খাবার ও ওষুধ মজুত করা হয়েছে। তার ফলে ভুরাজনৈতিক টেনশন বেড়েছে। ডাব্লিউইএফের মতে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা যে সমস্যায় পড়েছি, তার সমাধান করার জন্য সকলকে উদ্যোগী হতে হবে।
করোনা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে ‘মি-ফার্স্ট’ নীতি সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিনের কোটি কোটি ডোজ কিনে নিয়েছে। তারা এত বেশি ডোজ কিনেছে, যা দিয়ে দেশের সব মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েও বেঁচে যাবে। অথচ, গরিব দেশগুলি ভ্যাকসিন পাচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ইতিমধ্যেই সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, এই ঘটনা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ভ্যাকসিন নিয়ে এই পরিস্থিতি বা যাকে টিকা-জাতীয়তাবাদ বলা যায়, তার ফলে করোনা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, বিশ্বজুড়ে পর্যটনের ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা আছে তা ওঠার ক্ষেত্রে দেরি হবে। ডাব্লিউইএফের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমরা সকলেই একই নৌকার যাত্রী। এগোতে গেলে আমাদের নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা করতে হবে।’
দাভোসের বৈঠকে গত কয়েক বছর ধরে খুবই গুরুত্ব পেয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি। করোনার পর অধিকাংশ দেশেই লকডাউন ছিল। ফলে পরিবেশে তার প্রভাব পড়েছিল এবং দূষণ অনেক কম ছিল। কিন্তু এখন অধিকাংশ দেশেই কড়াকড়ি অনেকটাই কমেছে। ফলে দূষণ আবার ফিরে এসেছে। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাদিয়া জাহিদি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘দ্রুত আর্খিক বৃদ্ধির দিকে যেতে গিয়ে দেশগুলি পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, সেই ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের একটা ভারসাম্যের নীতি নিতে হবে। তাদের গ্রিন ইকনমিক্সের দিকে যেতে হবে। দ্রুত আর্খিত বৃদ্ধি, চাকরির সুযোগ তৈরি হওয়া যেমন জরুরি, তেমনই পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিও জরুরি।’
তবে আশার কথা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বেশ কিছু দেশ গ্রিন রিকভারি প্যাকেজের জন্য কয়েকশ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে। চীনের মতো অনেকেই জিরো এমিশন নীতি রূপায়ণ করছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাইডেন জানিয়ে দিয়েছেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দাভোস শীর্ষবৈঠক চলার সময়ই বাইডেনের পরিবেশ-দূত জন কেরি একটি বিবৃতি দিতে পারেন।
সূত্র: ডয়চে ভেলে।