spot_img

মহামারির ভেতরও হাজারো মানুষকে বিতাড়ন কানাডার

অবশ্যই পরুন

কোভিড-১৯ ঝুঁকির ভেতরেও গত বছর কানাডা কয়েক হাজার মানুষকে দেশ থেকে বিতাড়িত (ডিপোর্টেশন) করেছে। আইনজীবীরা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী জরুরি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাঝে এভাবে অকারণে লোকজনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে প্রশাসন।

অন্যান্য দেশের মতোই কানাডাও কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে এবং দেশের নেতারা এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছেন।

অভিবাসী আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা গত বছরের নভেম্বরে কানাডার এই ‘পুনরায় নির্বাসনের’ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।

মহামারিতে এখন পর্যন্ত ঠিক কতজনকে ওই দেশ থেকে চলে যেতে বলা হয়েছে, তার সঠিক তথ্য জানা না গেলেও অভিবাসী আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার এবং সরকারের পক্ষ থেকে যে সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে, সেই আলোকে ইতোমধ্যে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।

২০২০ সালে কানাডা ১২ হাজার ১২২ জনকে দেশটি থেকে বিতাড়িত করেছে, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৮৭৫ জন বেশি এবং ২০১৫ সালের পর সংখ্যায় সর্বোচ্চ।

কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির (সিএসবিএ) তৈরি করা তথ্য-উপাত্তের আলোকে এ কথা জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। দেশটির সরকারের মতে, এটি ‘দরকারি’ ছিল এবং নিরাপদভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।

সিএসবিএর মতে, গত বছর নির্বাসিত মানুষের সংখ্যা এত বেশি হওয়ার কারণ, যারা এখান থেকে বেরিয়েছেন, তারা স্বেচ্ছায়ই বেরিয়েছেন; একে ‘প্রশাসনিক অপসারণ’ নাম দিয়েছেন তারা। ২০১৯ সালে প্রশাসনিক অপসারণের তালিকায় ছিলেন ১ হাজার ৬৫৭ জন; অথচ ঠিক পরের বছরেই এটি দাঁড়ায় ৮ হাজার ২১৫ জনে।

কানাডা যেখানে তার ‘অ-নাগরিকদের’ বিশ্বব্যাপী চলা একটি স্বাস্থ্যগত দুর্যোগের সময় বের করে দিচ্ছে, বিপরীতে নবনিযুক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার প্রশাসনিক দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার ভেতরেই ১০০ দিনের জন্য ডিপোর্টেশন স্থগিত ঘোষণা করেছেন।

গত বছরের মার্চে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কানাডা ডিপোর্টেশনের ওপর স্থগিতাদেশ আরোপ করে; কিন্তু নভেম্বরের শেষেই আবার তা উঠিয়ে নেওয়া হয়।

হিউমান রাইটস ওয়াচের রিফিউজি রাইটস প্রোগ্রামের পরিচালক বিল ফ্রেলিক জানান, ‘এটা যতটা মানবাধিকার বিষয়ক, ঠিক ততটাই স্বাভাবিক বিবেচনাবোধের বিষয়।’

মহামারির ভেতর দেশগুলোর নির্বাসন ব্যবস্থায়ও ভিন্ন ভিন্ন ধরন দেখা গেছে। যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

২০২০ সালে বিপুল পরিমাণ মানুষকে দেশ থেকে তাড়ানোর পেছনে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ‘লঙ্ঘন’। এমনকি প্রশাসনিক অপসারণের তালিকার বাইরেও এক হাজারের ওপর মানুষ রয়েছেন, যাদের এ অভিযোগে বের করা হয়েছে।

এটি অবিশ্বাস্য

করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে, ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি এখন আরও বেশি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তাই ভ্রমণে সর্বোচ্চ সতর্কতা মেনে চলতে পরামর্শ দিচ্ছেন।

এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাবার সময় বিভিন্ন বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতির প্রয়োজন পড়ে; বিভিন্ন দেশের মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়, যা ভাইরাস ছড়ানোর জন্য অত্যন্ত মোক্ষম পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে!

গত বছরের আগস্ট থেকেই কানাডা সিএসবিএর সহযোগিতায় ডিপোর্টেশন পরিচালনা করে আসছিল, খোদ কানাডিয়ানদের অনেকেও তাদের আওতায় রাউন্ড ট্রিপ ফ্লাইটস গ্রহণ করেন।

কানাডিয়ান বার অ্যাসোসিয়েশন এবং কানাডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব রিফিউজি লয়্যারসের মতো বিভিন্ন সংস্থা দেশটিতে এভাবে মহামারি চলাকালে মানুষকে উচ্ছেদের সমালোচনা করেছে।

‘যেখানে সবাই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, সেখানে সিএসবিএ তাদের বিতাড়ন কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার মতো অবিশ্বাস্য কাজ করল,’  মন্তব্য করেন কানাডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব রিফিউজি লয়্যারসের প্রেসিডেন্ট মউরিন সিলকফ।

তিনি আরও বলেন, ‘কানাডা একবার ঘোষণা দিয়েছে, প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ মানুষকে এখন উৎখাত করা হচ্ছে এবং কোথাও সুস্পষ্ট করে বলা নেই, কেন এই অপসারণ।’

অন্যদিকে, সিএসবিএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিদেশি সরকারি দপ্তর ও সীমানা খুলে যাওয়ায়, বিমানসংস্থাগুলো তাদের রুট পুনরায় চালু করায় এবং জনস্বাস্থ্য প্রোটোকলগুলো ‘আকাশপথে সরানো ব্যক্তিদের সুরক্ষায় উচ্চ স্তরের অবদান রাখায়’, শেষ পর্যন্ত তারা ডিপোর্টেশন চালু করেছে।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, ‘এই অপসারণ প্রক্রিয়া যেন ন্যায্য এবং ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়, তাই চেক ও ব্যালেন্স অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

কিন্তু আইনজীবীরা সমালোচনার সুরে বলেন, শুধু যারা বিতাড়িত হচ্ছেন তারাই নন, এই সমগ্র প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে।

‘তারা এমন গতিতে অপসারিত করছে, যেন কোনো মহামারি ঘটেইনি। এটা রীতিমত অবিশ্বাস্য,’ বলেন অভিবাসী আইনজীবী লর্ন ওয়াল্ডম্যান।

  • সূত্র: রয়টার্স

সর্বশেষ সংবাদ

মুজিববর্ষের নামে ভাস্কর্য-ম্যুরালে হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট: শফিকুল আলম

মুজিববর্ষের নামে কত টাকা অপচয় করা হয়েছে তা বর্তমান সরকার খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ