জালিয়াতি করে শিশুকল্যাণ ভাতা তোলার জন্য হাজার হাজার লোককে ত্রুটিপূর্ণভাবে অভিযুক্ত করে তাদের কাছ থেকে অর্থ ফেরত নেয়া হয়েছে ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট ও মন্ত্রীসভার সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন।
শুক্রবার হেগে প্রধানমন্ত্রী রুট মন্ত্রীসভার এক বৈঠক আহ্বান করেন। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রীসভার পদত্যাগের বিষয়ে রাজা উইলিয়াম আলেকজান্ডারকে অবহিত করেন।
ডাচ রাজস্ব বিভাগ এর আগে ২০১৩ থেকে ২০১৯ মেয়াদে হাজার হাজার পরিবারকে জালিয়াতি করে শিশুকল্যাণ ভাতা তোলার জন্য অভিযুক্ত করে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব বিভাগ পরিবারগুলোর কাছে হাজার হাজার ইউরো দাবি করে যার ফলে তাদের অর্থনৈতিক দুর্দশা তৈরি হয়। অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে অনেক পরিবারেই বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে।
পরে জালিয়াতির বিষয়ে তদন্তের পর পার্লামেন্টারি কমিটির প্রতিবেদনে ওই ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন অন্যায়’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, জালিয়াতির অভিযোগ করার পর অভিযুক্তদের তাদের নির্দোষিতা প্রমাণের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি।
২০১০ থেকে দায়িত্ব পালন করা প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট এই অবস্থাকে ‘লজ্জ্বাজনক’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
বিরোধীদলীয় গ্রিন লেফটের নেতা জেসি ক্লেভার শুক্রবার এক টুইট বার্তায় রুটের মন্ত্রীসভার পদত্যাগকে নেদারল্যান্ডের জন্য ‘সঠিক সিদ্ধান্ত ’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি লিখেন, ‘এটি হোক নতুন এক সূচনা, বাঁক পরিবর্তনের মুহূর্ত। যে মুহূর্তে আমরা আমাদের কল্যাণ রাষ্ট্র আবার গড়ে তুলবো।’
বৃহস্পতিবার বিরোধীদলীয় লেবার পার্টির নেতা লুডউইক অ্যাসেরের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে রুটের চার দলীয় জোটের ওপর চাপ বেড়ে যায়।
অ্যাসের ২০১২ থেকে ২০১৭ মেয়াদে নেদারল্যান্ডের সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার সময় তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম না হাজার হাজার পরিবার রাজস্ব বিভাগের ত্রুটিপূর্ণ শিকারে পরিণত হয়েছিল।’
রাজস্ব বিভাগের ত্রুটির পরিপ্রেক্ষিতে কমপক্ষে ১০ হাজার পরিবারকে জালিয়াতির জন্য অভিযুক্ত করা হয়। গড়ে প্রতি পরিবারের কাছ থেকে ৩০ হাজার ইউরো (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ২১৫ টাকা) অর্থ ফেরত চাওয়া হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো অর্থমন্ত্রী উপক হোয়েকস্ট্রা ও ইকোনোমিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী এরিক উইবেসসহ পাঁচজন রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনার অভিযোগে এই সপ্তাহে মামলা দায়ের করেছে।
হোফডোফের বাসিন্দা ৪৬ বছর বয়স্ক শেফ রজার ডেরিক্স দুই সন্তানের বাবা। তাকেও জালিয়াতি করে শিশুকল্যাণ ভাতা তোলার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ৬০ হাজার ইউরো (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৬১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬৯ টাকা) ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
ডয়েচ ভেলেকে তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড এই চাপ আমার বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম একটি কারণ। রাজস্ব বিভাগ খুবই শক্তিশালী। কোনো প্রকার বিচারের সুযোগ না দিয়েই, তারা আপনার কাছ থেকে অর্থ নিংড়ে নেয়।’
ডেরিক্সের দুই সন্তান বর্তমানে ১৪ ও ১৭ বছর বয়স্ক। তিনি জানান, পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক চমৎকার থাকলেও ওই ঘটনায় পুরো পরিবারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
তিনি বলেন, ‘তারা আমার ঘরে এসে আমার ফ্রিজ নিয়ে যায়, আমার গাড়ি নিয়ে যায়, আমার ৪০ ভাগ বেতন নিয়ে যায়।’
কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও গণমত জরিপ অনুযায়ী রুটের পক্ষে তিন ভাগের দুই ভাগ মানুষের সমর্থন আছে।
রুট বলেছেন, দেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
আগামী ১৭ মার্চ নেদারল্যান্ডের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ১৫০ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রুটের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পার্টি অব ফ্রিডমের নেতা গির্ট ওয়াইলডারস। ইসলামবিরোধী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরোধিতা করা দলটি ২০১৭ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে ছিল।
নেদারল্যান্ড বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর লকডাউনের মধ্যে রয়েছে।
সূত্র : ডয়েচ ভেলে