যারা এখনো জঙ্গিবাদের মতো ভুল পথে আছে তাদেরকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। জঙ্গিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা এখনো ওই পথে আছো, তোমারা ফিরে এসো। কারণ তোমরা কখনো বিজয়ী হবে না।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর র্যাব সদর দপ্তরে ৯ জঙ্গির আত্মসমর্পণ উপলক্ষ্যে ‘নব দিগন্তের পথে’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
যারা সমাজের মূলধারায় ফিরে এসেছেন তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘তোমরা আলোর পথের অভিযাত্রী, এটা দুঃসাহসিক কাজ। এজন্য তোমাদের অভিনন্দন।’
আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিদের মধ্যে ছয় জন জেএমবির এবং তিন জন আনসার আল ইসলামের সদস্য ছিলেন।
আইজিপি বলেন, ওই ককটেল, জর্দার কৌটা বা এ জাতীয় জিনিসপত্র দিয়ে তোমরা কারো বিরুদ্ধেই বিজয়ী হতে পারবে না। বরং ওই পথে গিয়ে তোমরা পরিবার-সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছো। এই অন্ধকার জগত তোমার নিজেকে, পরিবারকে এবং রাষ্ট্রকে বিপদে ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ বার বার জঙ্গিবাদে আক্রান্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে এর কোনটাই বাংলাদেশ থেকে সৃষ্টি হয়নি। প্রতিবারই বাইরের দেশ থেকে এসেছে, প্রতিবারই শান্তিপ্রিয় মানুষের সহায়তায় পরাস্ত করেছি। এখনো যারা এ ধরনের কাজে জড়িত আছে, তাদের প্রতি আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে। র্যাব, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজমসহ একাধিক টিম তাদেরকে নজরদারিতে রেখেছে। আমাদের গোয়েন্দা কমিউনিটিও এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। হয়তো পরিপূর্ণভাবে সব ঘটনা শুরুতে বিনষ্ট করতে পারিনি। শতভাগ না হলেও অন্তত ৯০ ভাগেরও বেশি ঘটনা শুরুতেই বিনষ্ট করতে সক্ষম হয়েছি।
জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার এই ধারা বাংলাদেশই প্রথম চালু করেছে জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, হলি আর্টিজানের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদেরকে নানা বিধি নিষেধ দিয়েছে। অনেকে বলেছে বাংলাদেশ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। পৃথিবীর কোন দেশ আমাদের তখন সহায়তা করেনি। কিন্তু দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে আমরা জঙ্গিবাদকে পরাজিত করেছি। শুধু একবার নয়, জঙ্গিবাদ বার বার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে আমরা বার বার পরাজিত করবো। কোনক্রমেই দেশে জঙ্গিবাদের কার্যক্রম সফল হতে দেবো না বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ড. বেনজীর আহমেদ।
সভাপতির বক্তব্যে র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, যারা আজ সমাজের মূলধারায় ফেরার জন্য আত্মসমর্পণ করেছেন, তাদেরকে এই সমাজ যেন আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করে নেয়। তুই জঙ্গি বলে যেন তাকে আবারো নেতিবাচক পথের দিকে যেন ঠেলে দেওয়া না হয়।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ একটা আদর্শিক সমস্যা, এটা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন সঠিক ধর্মীয় ব্যাখ্যা। তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে চাই।
আজ আত্মসমর্পণ করা ৯ জনের মধ্যে আট জনই তাদের পরিবারের কাছে ফেরত যাবেন। একজনকে আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে, আইনি কার্যক্রমের মাধ্যমে পরবর্তীতে ফেরত যাবেন তিনিও।